কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ব্যবস্থা নিন


প্রকাশিত: ০৪:০০ এএম, ২২ মে ২০১৭

বর্তমানে কিছু শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাড়িতে পড়ানোর কৌশল তৈরি করেছেন। বাড়িতে পড়িয়ে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে নিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল রোববার রাজধানীর পলাশীর ব্যানবেইজ ভবনে অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কল্যাণ ও অবসর ভাতার চেক প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রীর কথার সাথে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। বলা যায় তিনি লাখ লাখ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন।

কোচিং বাণিজ্য বন্ধে একটি নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। সত্যি বলতে কি এটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শুধু নীতিমালা করলেই হবে না সেটি কতোটা বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য সে দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে থাকলে চলবে না আসলে যার কোনো প্রয়োগগত বাস্তবতা নেই। অভিযোগ আছে, স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলের বাইরে কোচিংয়ে ক্লাস করিয়ে বাড়তি টাকা পান বলে স্কুলগুলোতে ঠিকমতো ক্লাস নেন না। কিন্তু সরকার যেহেতু তাদের বেতন দেন, স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস নেয়া তাদের দায়িত্ব। তাই শিক্ষকদের কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা জরুরি।

সত্যি বলতে কি শিক্ষাঙ্গনে কোচিং ব্যবস্থা এক মারাত্মক ব্যাধির রূপ নিয়েছে। তার বিস্তার ঘটেছে বিপুলভাবে। অধিক উপার্জনের জন্য একশ্রেণীর শিক্ষক কোচিংয়ে তার শক্তি ও সময় ব্যয় করছেন। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাদান। আবার এর অন্য একটি অনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও একধরনের চাপ অনুভব করেন শ্রেণীকক্ষের শিক্ষকের কাছে কোচিংয়ে পড়াতে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা অনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে।

প্রতিযোগিতামূলক সমাজে সাধারণভাবে পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের আশায় শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছে। শ্রেণীকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করা গেলে, মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একজন শিক্ষার্থীর কোচিংয়ে পড়ার দরকার হতো না। শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি বাস্তবসম্মত অনুপাত রক্ষা করাও জরুরি। সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য পুরো বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতেই হবে। শিক্ষাকে কিছুসংখ্যক লোকের অনৈতিক বাণিজ্যের ধারা থেকে বের করে আনতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের পূর্ণ প্রস্তুতি ও মনোযোগ দিতে হবে।

বিশ্বের কোথাও মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ ধরনের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির রমরমা ব্যবসা নেই। বর্তমান বাস্তবতায় কোচিং ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দানের পাশাপাশি দক্ষ, মেধাবী ও সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষকতার পেশায় আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।