অর্থপাচার বন্ধে চাই কঠোর ব্যবস্থা


প্রকাশিত: ০৪:০৮ এএম, ০৫ মে ২০১৭

এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ পাচার প্রতিরোধে তেমন কোনো ব্যবস্থায়ই কার্যকর নয়। অর্থ পাচারকারীরা শাস্তির আওতায়ও আসছে না। ফলে পাচার বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা রোধ করতে না পারলে এটি দেশের অর্থনীতিকে একটি ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অর্থপাচারের উদ্বেগজনক তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয় ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে তিন লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা (চার হাজার ৪৬১ কোটি ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার), যা দেশের বর্তমান মোট জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। ভাবা যায়! প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিবছর অর্থপাচার হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এই ১০ বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থপাচার দুই ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার ২৪ শতাংশ উন্নয়নশীল থেকে। জিএফআই ২০১৩ সালে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেটা থেকে জানা যায়, ২০১৩ সাল পর্যন্ত হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ৫৫৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল। তিন বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬৬ কোটি ডলার। নতুন প্রতিবেদনে পাচারের হার আরও বেশি।

সোমবার প্রকাশিত ‘নতুন গবেষণা: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বড় এবং স্থায়ী অবৈধ আর্থিক প্রবাহ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পণ্য বা সেবা আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এসব অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অর্থাৎ আমদানিতে পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে এবং রফতানিতে কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও পাচার করা হচ্ছে অর্থ। যার প্রভাব বোঝা যায় সাম্প্রতিক রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।

আগে অর্থ পাচারকারীর তালিকায় শীর্ষে ছিলেন রাজনীতিবিদরা। এখন ব্যবসায়ীরা। তার পরই রয়েছেন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা। ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে নানা রকম প্রণোদনা নিয়ে ব্যবসা করেন। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, শিল্পায়ন হবে, কর্মসংস্থান হবে এটাই থাকে লক্ষ্য। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পণ্য-আমদানি রফতানির নামে দেশের বাইরে টাকা পাচার করে দেন। এটা আইনের লঙ্ঘন তো বটেই দেশের মানুষের সাথেও স্পষ্ট প্রতারণা। এরফলে বিনিয়োগ গতি পাচ্ছে না। বেকারত্ব বাড়ছে। দারিদ্র্যও পিছু ছাড়ছে না। দুঃখজনক হচ্ছে পাচার রোধে সরকারি ব্যবস্থায়ও সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসব ক্ষেত্রে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না। এছাড়া বন্ড সুবিধা ভোগ করা প্রায় শতভাগ কারখানাই আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় মুদ্রাপাচার রোধে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে।

অর্থপাচার রোধ করা না গেলে  ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে সবক্ষেত্রে। বিনিয়োগ বাড়বে না। উন্নয়নও থেমে যাবে। জঙ্গিবাদসহ নানাক্ষেত্রে অর্থের অপব্যবহারও বেড়ে যাবে। এ জন্য সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অর্থ পাচার রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।