নির্বাচন আসছে?


প্রকাশিত: ০৩:০০ এএম, ২১ এপ্রিল ২০১৭

১. এই রোববার এপ্রিলের ১৬ তারিখ আমাদের নতুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হল। একাত্তর সালে আমাদের দেশে যে গণহত্যাটি হয়েছিল সেরকমটি পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছিল কি না আমার জানা নেই। এই দেশের মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা সেই সময় যে বীরত্ব দেখিয়েছিল এবং মাত্র নয় মাসে তারা যত বড় অর্জন করেছিল, পৃথিবীতে তার তুলনা পাওয়াও খুব কঠিন। কাজেই আমরা অনুমান করতে পারি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরটি পৃথিবীর একটি সবচেয়ে চমকপ্রদ জাদুঘর হওয়ার দাবি রাখে। কাজেই যেদিন জাদুঘরটি উদ্বোধন করার দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল আমি আমার সব কাজ ফেলে এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওযার জন্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলাম।

আমি মফস্বলে থাকি, তাই ঢাকা শহরেরর প্রিয় মুখগুলো সবসময় দেখতে পাই না। এই অনুষ্ঠানে এসে একসঙ্গে সবার সাথে দেখা হয়ে গেল। একাত্তরের বড় বড় মুক্তিযোদ্ধারা চুপচাপ বসে ছিলেন, আমি তাদের একজনের পিছনে বসে গিয়েছি। জাদুঘরটি উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দীর্ঘ ভাষণ দিলেন। যারা শুনেছে তারা সবাই বলবে এটি অতি চমৎকার একটি ভাষণ ছিল। তার ভাষণ শুনতে শুনতে আমার বারবার নব্বইয়ের দশকের কথা মনে পড়ছিল, যখন এই দেশটি রাজাকারদের অভয়ারণ্য হয়েছিল। সেই সময় কেউ কি কল্পনা করেছিল একসময় আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে? তাদের শাস্তি দেওয়া হবে? এই দেশে গণহত্যা করার জন্যে তাদের ফাঁসি দড়িতে ঝুলতে হবে?

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে শুনতে আমার আরও একটি কথা মনে পড়ল, সেটি হচ্ছে সামনে নির্বাচন আসছে। তখন আমি মনে মনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। অচিন্ত্যনীয় একটি মূল্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতাটি পেয়েছি অথচ এখনও নির্বাচনের রাতে আমরা দুর্ভাবনা নিয়ে রাত কাটাই। যারা এই দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা কি আবার ক্ষমতায় এসে আমাদের দেশটিকে উল্টোপথে নিয়ে যাবে?

আমি অবশ্যি সবসময়েই স্বপ্ন দেখি: আমাদের দেশের নির্বাচনের বিজয়ী দল এবং বিরোধী দল দুটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল। তাই একটি সময় আসবে যখন নির্বাচনে কোন দল জিতে এসেছে সেটি নিয়ে আমাদের আর কখনও দুর্ভাবনা করতে হবে না। এই দেশ অনেক পথ অতিক্রম করে এসেছে, আমার ধারণা, রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে এই দেশে বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে আর কেউ কোনোদিন রাজনীতি করতে পারবে না।

২. আমরা টের পেতে শুরু করেছি নির্বাচন আসছে। যেভাবে টের পেয়েছি সেটি যে আমরা খুব পছন্দ করেছি তা নয়। শুরু হয়েছে পাঠ্যবই হেফাজতিকরণ দিয়ে। এই দেশের সরকার কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে হাত দিতে পারে না, কিন্তু হেফাজত এই দেশের মূলধারার পাঠ্যক্রমে শুধু যে হাত দিতে পারে তা নয়, সেটি তারা পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। আমার এখনও বিশ্বাস হয় না হেফাজতে ইসলামকে খুশি করার জন্যে আমাদের পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। পাঠ্যবই দিয়ে শুরু হয়েছে, কোথায় শেষ হবে, আমরা জানি না।

হেফাজতের কাছে নতজানু হয়ে এই আত্মসমর্পণ যে একধরনের ভোটের রাজনীতি সেটি বোঝার জন্যে কাউকে ‘রকেট সায়েন্টিস্ট’ হতে হয় না। কিন্তু আমরা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখে এসেছি ভোটের এই রাজনীতি কখনও কাজ করেনি, সাম্প্রদায়িক দলগুলো কখনও আওয়ীমী লীগকে ভোট দেয়নি, কখনও দেবে না।

গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিহত করার জন্যে তারা যখন ঢাকায় সমাবেশ করেছিল সেই সমাবেশ থেকে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে উক্তিগুলো করেছিল সেটি তাদের সত্যিকারের মনোভাব। মেযেদের ‘তেঁতুলে’র সাথে তুলনা করা, তাদের ঘরে আটকে রাখা তাদের আদর্শ। অথচ আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমাদের বাংলাদেশ যে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে তার সবচেযে বড় কারণ হচ্ছে যে এখানে ছেলেরা আর মেয়েরা প্রায় সমান-সমানভাবে পাশাপাশি লেখাপড়া করছে! যেটি আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি সেটিকে ধ্বংস করার জন্যে যে সংগঠন, আমরা সেই সংগঠনের কাছে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করছি, সেটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না।

৩. নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচনে কার সাথে কার যুদ্ধ হবে, কেউ কি অনুমান করতে পারবে? আমার ধারণা যুদ্ধটি হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছাত্রলীগের। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এত আসাধারণ নৈপুণ্যে দেশ চালিয়েছেন যে শুধু দেশে নয় সারা পৃথিবীতে তাঁর বিশাল একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নয়, শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে। অথচ ছাত্রলীগ নামক প্রতিষ্ঠান এককভাবে সামনের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সমস্ত অর্জন ম্লান করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুঃখের কথা হচ্ছে ছাত্রলীগকে এই ‘ফ্রাংকেনস্টাইনে’ রূপ দিয়েছে তাদের কিছু শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় কিছু ভাইস চ্যান্সেলর।

আমরা পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে ছাত্রলীগের খবর পাই। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের অবশ্যি পত্রপত্রিকার খবর পড়তে হয় না, আমরা নিজের চোখে তাদের কর্মকাণ্ড দেখতে পাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের একেবারে শেষ ঘটনাটির কথা হয়তো অনেকেই শুনেছে।

এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া একটি মেয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছে। একটি মেয়েকে দেখলে তাকে যেভাবে উত্যক্ত করার কথা, ছাত্রলীগের ছেলেরা ঠিক সেভাবে তাকে উত্যক্ত করেছে। মেয়েটা যখন প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে তখন ছাত্রলীগের ছেলেরা তার গায়ে হাত তুলেছে। একটি মেয়ের সবসময় সব ধরনের অপমান মুখ বুঁজে সহ্য করার কথা, তাদের প্রতিবাদ করার কথা নয়। যদি প্রতিবাদ করার দুঃসাহস দেখায় তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিশ্চয়ই সেই মেয়েটিকে চড়থাপড় দেওয়ার অধিকার আছে!

ঘটনাটি এখানে শেষ হয়ে গেলে হয়তো কেউ সেটি সম্পর্কে জানত না। আজকাল ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা সবসময় ঘটছে। কিন্তু ঘটনা আরেকটু গড়িয়ে গেল, এই ঘটনার সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হল। তারা ছাত্র-সাংবাদিক তাই খবরটি খবরের কাগজে ছাপা হল। মেয়ের অভিভাবক স্থানীয় থানায় মামলা করার চেষ্টা করলেন, অবশ্যই সেটি করা সম্ভব হল না। ছাত্রলীগের ছেলেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অলিখিত ‘ইনডেমনিটি’ রয়েছে, প্রশাসন তৈরি হয়েছে তাদের সাহায্য করার জন্যে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যে নয়। অভিভাবকেরা তখন কোর্টে মামলা করে দিলেন।

এই বিষয়গুলো আমাদের জানার কথা নয়, কে কার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সেটি আমরা কেমন করে জানব? তবে আমরা অবশ্যি জেনে গেলাম, কারণ কিছুক্ষণের মাঝে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত হল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গেট আটকে দিয়ে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হল। আমার ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ফোন করে জানাতে লাগল তারা আসতে পারছে না– লেখাপড়া বন্ধ।

ড্রাইভার ইচ্ছে করে একজনের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে মেরে ফেলার পর তাকে বিচার করে শাস্তি দেওয়া হলে দেশের একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছিল, ঘটনাটা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। কাজেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার অধিকার আছে!

এরকম সময় তখন আরেক ধরনের প্রহসন হয়। অপরাধী ছাত্রদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়!

এই সাময়িক বহিষ্কার বিষয়টি খুবই চমকপ্রদ একটি বিষয়। যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্ব দেখানো হলে সাহসিকতার জন্যে যে পদক দেওয়া হয় সাময়িক বহিষ্কারটি হচ্ছে সেরকম একটি ‘পদক’। যাদের বহিষ্কার করা হয় তাদের লেখাপড়া কিংবা পরীক্ষা দিতে কোনো সমস্যা হয় না। তারা নির্বিঘ্নে লেখাপড়া শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে বের হযে যায়। যেহেতু তারা বহিষ্কৃত ছাত্র কাজেই তারা যখন নতুন করে অপরাধ করে তাদের নতুন করে শাস্তি দেওয়া যায় না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সবাই একধরনের সমীহের দৃষ্টিতে তাদের দেখে। কথাবার্তায় তারা বুকে থাবা দিয়ে বলে:

“এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি শিক্ষকদের পিটিয়েছি আমার কিছু হয় নাই।”

(কথাটি সত্যি, আমাদের ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগের ছাত্রদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছিলেন। ভাইস চ্যান্সেলর এবং ছাত্রলীগ দুই পক্ষই বহাল তবিয়তে আছে।)

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই যখন কাজেকর্মে তাদের ব্যবহার করেন তাদের দাপট তো থাকবেই। শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশান বোর্ডের সদস্যদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে দেনদরবার করে ঠিক করে কাকে নিয়োগ দিতে হবে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।

ছাত্রলীগের গল্প বলে শেষ করা যাবে না, কিন্তু নোংরা কথা বলার মাঝে কোনো আনন্দ নেই। আমি মফস্বলের ছোট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, কোনো কিছু জানতে চাই না। তারপরও তাদের কর্মকাণ্ডের কথা কানে চলে আসে, যার অর্থ আমাদের দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চয়ই একই ঘটনা ঘটছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরই যদি এদের উৎপাতে নাভিশ্বাস উঠে যায় তাহলে অন্যদের কী অবস্থা? দেশের আনাচে-কানাচে শহরে-বন্দরে-গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গাতেই নিশ্চয়ই একই ঘটনা ঘটছে। সেখানে শুধু ছাত্রলীগ নয়, যুবলীগ ও আওয়ীমী লীগের সদস্যরাও নিশ্চয়ই আছে। যখন কিছু একটা ঘটে, নানা রকম বাধাবিপত্তি পার হয়ে সেটা যদি খবরের কাগজ পর্যন্ত চলে আসে তখন আওয়ামী লীগের নেতারা সেটাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন।

এখন পর্যন্ত যে দুটো গুরত্বপূর্ণ ‘থিওরি’ দেওয়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে ‘কাউয়া’ থিওরি অন্যটি ‘ফার্মের মুরগি’ থিওরি! যে থিওরিগুলো দেওয়া হয়েছে তার মূল বক্তব্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ তারা সবাই ধোয়া তুলসি পাতা, বাইরের মানুষেরা এসে এই তুলসি পাতাদের কলুষিত করেছে।

সত্য স্বীকার করে নেওয়া ভালো, বিষয়টি তা নয়। বাইরের লোকজনের সাহায্য ছাড়াই এই ছাত্রলীগ নিজেরাই যে কোনো পরিবেশ বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। হঠাৎ হঠাৎ নির্বাচন দেওয়া হলে যখন দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরে যাচ্ছে এবং তার কারণ খুঁজে বের করার জন্যে যখন ‘দলীয় কোন্দল’ ইত্যাদিকে দোষ দেওয়া হচ্ছে, আসল কারণ হয়তো সেটা নয়। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা যেরকম ছাত্রলীগের উৎপাতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে আছি, হয়তো ঠিক একইভাবে দেশের মানুষজন ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ সাধারণভাবে চিন্তা করে। যে মানুষেরা তাদের জ্বালাতন করে তারা কোন দুঃখে তাদের ভোট দিতে যাবে?

৪. বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো দেখে আমার সবসময়েই মনে হয়েছে তারা বুঝি পণ করেছে যে, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশকে খাটো করে দেখতে হবে। সেদিন আমি প্রথমবার দেখতে পেলাম ‘ইকনোমিস্ট’ নামের সংবাদমাধ্যমটি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতির দেশ। অবশ্যি বিদেশি গণমাধ্যমের খবর পড়ে আমাদের এই তথ্য পেতে হয় না, আমরা নিজেরাই আমাদের চারপাশে দেখে সেটি বুঝতে পারি।

অনেকগুলো ঘটনার মাঝে আমার প্রিয় ঘটনাটি হচ্ছে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঠিক করলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাহায্য না নিয়েই নিজেদের টাকায় পদ্মা ব্রিজ তৈরি হবে! শুধু যে বিস্ময়কর দ্রুতগতিতে সেটি তৈরি হচ্ছে তা নয়, দেখা গেছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা, সারা পৃথিবীর সামনে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠানকে এর আগে অন্য কোনো দেশ এভাবে তাদের স্বরূপে দেখিয়েছে কি না, আমার জানা নেই।

ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে ঢাকা শহর সারা পৃথিবীর মাঝে দ্বিতীয়, সেটি নিয়ে আমার ভেতরে কোনো অহংকার নেই, বরং খবরটি শোনার পর থেকে আমি একটু দুশ্চিন্তার মাঝে আছি। কিন্তু যখন জানতে পারি নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন পৃথিবীর হেরিটেজের অংশ, তখন নিঃসন্দেহে আমি অহংকার অনুভব করি।

তৈরি পোশাক শিল্পে সারা পৃথিবীর মাঝে আমরা দ্বিতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। গুণগত দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চামড়া শিল্প দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এরকম অনেকগুলো উদাহরণ এখন আমাদের সামনে।

চার কোটি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ব্যাপারেও আমাদের সেরকম কিছু অর্জনের সুযোগ ছিল, এখন সেটা শুধু নতুন বই ছাপিয়ে ছেলেমেয়েদের হাতে সময়মতো তুলে দেওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। প্রশ্নফাঁস, কোচিং ক্লাস ইত্যাদির কারণে সেটি নিয়ে গর্ব করার বিশেষ সুযোগ নেই।

একাত্তরে জনসংখ্যা ছিল সাত কোটি, এখন ষোল কোটি। ফসল আবাদ করার জমি কমে গিয়েছে কিন্তু দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, এটি চাট্টিখানি কথা নয়। এই দেশে যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছিল তখন পৃথিবীর মোড়লেরা কতভাবে সেটাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করেছে, অথচ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি সত্যি সত্যি এই দেশের মাটিতে যদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের অর্জনের আরও অনেক কথা বলতে পারি এবং কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, তার অনেকগুলোর জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে।

আমি শুধু সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই এই সরকারের কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বিশাল একটা অর্জনকে দেশের মানুষের চোখে পুরোপুরি ম্লান করে দেওয়ার জন্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি তুচ্ছ ছাত্রলীগ কর্মীর মাস্তানিটুকুই যথেষ্ট। আমি বহুদিন আগে একবার লিখেছিলাম বিশাল একটা সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করা হলে পুরোটাই শূন্য হয়ে যায়। সেটি তখন যেমন সত্যি ছিল, এখনও তেমনি সত্যি আছে!

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।