এ নৈরাজ্যের শেষ কোথায়?


প্রকাশিত: ০৪:০৫ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে কার্যত অরাজকতার চূড়ান্তে পৌঁছেছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন মালিকরা সিটিং সার্ভিস বন্ধে একমত হয়েই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন এ বিষয়ে। কিন্তু মুখে একটা বললেও কার্যত অন্তরে অন্য কিছু লুকানো ছিল। কারণ গত দুইদিন ধরে বাস বন্ধ রেখে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। জিম্মি করা হয়েছে যাত্রীদের। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পায়নি। গতকালও ছিল একই অবস্থা। এ নিয়ে বাসের হেলপারদের সাথে বচসা হয়েছে যাত্রীদের। একাত্তর টিভির একজন সাংবাদিককে মারধর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থার অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সিটিং সার্ভিস নিয়মে অতিরিক্ত ভাড়া না দেয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছেন ৭১ টেলিভিশনের প্রযোজক আতিক রহমান। এলাকাবাসী ও বাসের যাত্রীদের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে ‘জাবালে নূর’ পরিবহনে চড়ে সিটিং সার্ভিস নিয়মে আগের মতো ভাড়া না দিয়ে লোকাল নিয়মে ভাড়া দিতে চাইলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে বাসটির শ্রমিকরা। এতে তার নাক ফেটে যায়। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে পরিবহন শ্রমিকরা কতোটা বেপরোয়া। এদিকে রাজধানীতে অভিযান চলাকালে কোনো পরিবহন মালিক বাস চালানো বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর রমনা এলাকায় সিটিং সার্ভিস ও যানবাহনের বাম্পারবিরোধী অভিযানের সময় এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, অভিযান চলছে। যারা আইন মেনে রাস্তায় বাস নামাবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমরা পূর্বেও সম্পাদকীয় স্তম্ভে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সজাগ হওয়ার কথা বলেছি। পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানই দেখতে চায়। মানুষজনকে জিম্মি করে যাতে পরিবহন মালিকরা কোনো অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহন নিয়ে যাত্রীদের দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই। কিন্তু বলা যায় অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবেই চলে গণপরিবহন।ঢাকায় মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারিত আছে কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা আর বড় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বনিম্ন দূরত্বের বেশি যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকার-নির্ধারিত কিলোমিটারপ্রতি ভাড়ার হার কার্যকর হওয়ার কথা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি মিনিবাসের কিলোমিটারের সর্বনিম্ম ভাড়া ৫ টাকা এবং বড় বাসে ৭ টাকা। কিন্তু আদায় করা হয় অনেক বেশি। বাসে উঠলেই কমপক্ষে ১০ টাকা ভাড়া গুণতে হয় যাত্রীদের। কোনো কোনো রুটে ২৫ টাকাও নেয়া হয় নিকটদূরত্বেও। সিটিংয়ের নামে এই চিটিং বন্ধ হওয়া দরকার। রাজধানীতে যেসব বাস চলে সেসবের মান থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি। এগুলোর ফিটনেস যেমন থাকতে হবে তেমনি দেখতেও যেন দৃষ্টিননন্দন হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।