আমরা ডাক্তাররা কোন প্রজাতি!


প্রকাশিত: ০৬:৩৫ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০১৭

টিভি চ্যানেলের মধ্যে এনিমেল প্ল্যানেট আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আমার প্রিয় চ্যানেলের অন্যতম। অবসরে এই চ্যানেলগুলিতে চোখ রাখতে আমার খুব ভাল লাগে। আর তা যদি হয় বাঘ আর সিংহ কর্তৃক নিরীহ প্রাণীর পেছনে দৌড়ানো তাহলে তো কথাই নেই। আরও ভাল লাগে যখন দেখি সেই নিরীহ প্রাণীই দল বেধে হিংস্র কোন প্রাণীর পেছনে দৌড়ায়। সম্প্রতি দেখা দুটি ভিডিও ক্লিপ ভুলতেই পারছি না যেখানে প্রথমটায় একদল মহিষ একদল সিংহকে কি নাস্তানাবুদই না করল আর দ্বিতীয়টায় মহিষের দলগত আক্রমণে একটি চিতাবাঘ গাছের মগডালে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। একেই বলে একতাই বল!

ঐসব অবলা মহিষের চাইতেও নিরীহ আমাদের দেশের ডাক্তার। সমাজে তারা এতটাই নিরীহ এবং নিগৃহীত যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরলে, গালিগালাজ করলে অথবা গায়ে হাত তুললে তারা নির্লিপ্ত থাকেন। সরাসরি নিজের গায়ে না পড়া পর্যন্ত তারা নির্লিপ্তই থাকতে চান। সম্প্রতি সময় টিভি সূত্রে প্রাপ্ত একটি নিউজকে কেন্দ্র করে দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন ভার্সনে একটি খবর আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে যার হেডলাইন ছিল, “তিনদিন ধরে আইসিইউতে রেখে লাশের চিকিৎসা”।

কী মারাত্মক অভিযোগ! অথচ চব্বিশ ঘণ্টা পার হতে চলল, কারো কোন প্রতিবাদ নেই। এনিমেল প্ল্যানেট আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলের মহিষের মত সবাই চাওয়া চাওয়ি করছে। পার্থক্য হলো, সেখানে মহিষদের নেতা প্রতিবাদ করলেও আমাদের ডাক্তার সমাজের নেতাদের কসেরুকাসম মেরুদণ্ডে প্রতিবাদের মত কোন জোর নেই! হতে পারে অভিযোগের পুরাটাই মিথ্যা বা বানোয়াট কিন্তু কোথায় বিএম এন্ড ডিসি, বিএমএ, স্বাচিপ, ড্যাব বা মেডিকোলিগাল সোসাইটি যারা ঘুরে দাঁড়াবে এই সংবাদের মিথ্যা প্রমাণে!

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মহিষের চেয়ে নিরীহ শ্রেণীভুক্ত এই সম্প্রদায়ের নেতারা নির্বাচনের আগে কি বজ্রকণ্ঠেই না ডাক্তারদের ভূলুণ্ঠিত মর্যাদা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করে যত্রতত্র নাটক মঞ্চায়িত করেন!! অথচ নির্বাচিত হয়েই তারা যান সুখ নিদ্রায়। এ নিদ্রা শুধু ট্রান্সফার পোস্টিং, আর ক্রয় বিক্রয়ের অংশীদারিত্বের সময় ক্ষণিকের জন্য প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি জনিত কারণে ভাঙানো যায়। নইলে আজকাল মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত অথবা কোর্টে ডাক্তাররা যখন নিগৃহীত হন কেন তাদের পাওয়া যায় না! অর্ডার অব প্রেসিডেন্সিতে যখন ডাক্তারদের কোন অবস্থান নেই সেখানে কেন তারা চুপ থেকে মেনে নেন!! কেন তারা মেনে নেন ইন্টার্ন ডাক্তারদের পিওন / আরদালিসম বেতন!

প্রশ্ন হলো ওইসব বিএমএ, স্বাচিপ, ড্যাব বা মেডিকোলিগাল সোসাইটির নেতারা কি বুঝতেই পারেন না তিনদিন ধরে আইসিইউতে রেখে লাশের চিকিৎসা জাতীয় সংবাদে কি মেসেজ যায় পাঠকদের কাছে! কেন তারা বোঝে না নিশ্চুপ থাকলে সামাজিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে! তারা কি সংবাদটিকে মিথ্যা ভেবে মনকলা চিবুচ্ছেন!! নাকি বাদী পক্ষ কোর্টে গেলে তখন লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন!!! এ ধরনের সংবাদের সত্যতা নিরূপণ এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের কি কিছুই করণীয় নেই? বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের মান অক্ষুণ্ণ রাখার বিধাতা বিএম এন্ড ডিসি কি স্বপ্রণোদিত হয়ে এখানে এগিয়ে আসতে পারে না!

আমি জানি প্রকাশিত সংবাদে অনেক গলদ আছে। ঘটনার সত্যতায় দায়ী হতে পারেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার আর মিথ্যা প্রমাণিত হলে প্রচারিত মাধ্যম। কোন ছাড় নয়। অন্যায় যে ই করুক তাকে শাস্তি পেতে হবে এরকম মনোভাব থাকাটাই তো যুক্তিযুক্ত, বিএম এন্ড ডিসি বা প্রেস কাউন্সিলে এটির সুরাহা হওয়া কি বাঞ্ছনীয় নয়?

আলোচিত বিষয়টিতে বিচারালয়, মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএম এন্ড ডিসি, বিএমএ, স্বাচিপ, ড্যাব বা মেডিকোলিগাল সোসাইটি সকলেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা বাঁধতেই হবে এবং যত তাড়াতাড়ি তা বাঁধা যায় ততই মঙ্গল।

লেখক : চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারা, মালয়েশিয়া।
[email protected]

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।