ক্ষতি কিন্তু সবার


প্রকাশিত: ০৩:০১ এএম, ০৩ এপ্রিল ২০১৭

ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দ্বীপের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া মাকসুদুল হাসান অনিককের সাজাও বহাল রেখেছেন আদালত। বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডও বহাল রেখেছেন আদালত।

গতকাল রোববার নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এই রায় ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে যা বলেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে নিজ বাসার সামনে ব্লগার রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত ইসলাম সম্পর্কে সঠিক বয়ান দিতে ইমামদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। ‘মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেন বিপথে যাচ্ছে’- এমন প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেছেন, ‘যেসব ছেলে-মেয়ে বিপথে যাচ্ছে তাদের অভিভাবকরা (পিতা-মাতা) উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারেন না। তাই তাদের সন্তানরা গোল্লায় (বিপথে) যায়।’

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘আমরা (বিচারপতিরা) এ মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয়ে খোঁজখবর এবং দুই পক্ষের আর্গুমেন্ট থেকে দেখেছি, আসামি মুফতি জসিম বাদে বাকি সকলেই (সাত আসামি) মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু তারা কেন বিপথে গেলেন? এটা আমরা এ মামলায় খুঁজে পাইনি। তবে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর বিপথে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এজন্য আমরা অভিভাবকরা অনেকাংশে দায়ী।’

আদালত বলেন, ‘এ কাজের জন্য প্রাইমারি শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবেশ, রাজনীতি, ধর্মীয় আচার-ব্যবহার, স্বাধীনতার ইতিহাস যথাযথভাবে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। এ নিয়ে সবাইকে এবং সরকারকেও ভাবতে হবে।’ ইমামদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘ইমামদের কাজ হচ্ছে মুসল্লিদের নামাজ পড়ানো এবং ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া। এমন কোনো বয়ান দেবেন না, যা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।’ আদালত বলেন, ‘যদি কেউ ইসলাম এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) অথবা যেকোন ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই।’

ছোট ছোট পরিবারের সমষ্টিই রাষ্ট্র। পরিবারে যদি সঠিক শিক্ষা না পায় সন্তানরা তাহলে সমাজ রাষ্ট্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ কারণে সমাজ গঠনে পরিবারের দায়িত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় সন্তান কোথায় যায় কার সাথে মিশে এটি খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ভুল আদর্শ দ্বার প্রভাবিত বা বিপথগামী হচ্ছে কিনা সেটিও দেখতে হবে। কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকলে চলবে না। সন্তান ও নিজেদের ভবিষ্যতকে নিষ্কন্টক রাখতে সবদিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

ইমামদের প্রতি আদালতের পর্যবেক্ষণও অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। ধর্মের নামে যেন কেউ অধর্ম করতে না পারে, আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় এ ব্যাপারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী চরমপন্থার উত্থানের এ সময়ে আমাদের দেশও আক্রান্ত। এ ব্যাপারে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদ যেন কোনো অবস্থায়ই সমাজকে গ্রাস করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই ক্ষতি কিন্তু সবার।

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।