এই মৃত্যুর ফাঁদ থেকে রক্ষা কিভাবে?


প্রকাশিত: ০৪:৫৬ এএম, ১৪ মার্চ ২০১৭

রাজধানীর মালিবাগে রেলগেট সংলগ্ন নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে স্বপন নামে এক পথচারী নিহত হওয়ার ঘটনাটি আবারো প্রমাণ করছে রাজধানীর পথে পথে কত মৃত্যুর ফাঁদ পাতা। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন এক প্রকৌশলী ও পথচারী। আহত দু’জনই তাদের পা হারিয়েছেন। নিহত স্বপনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। তিনি স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে নির্মাণকাজ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ক্রেন দিয়ে ওই গার্ডার তুলার সময় তা হঠাৎ নিচে ছিটকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে একজন তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী পলাশ। অন্য পথচারীর নাম নুরুন্নবী (৪০)। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন প্রকৌশলী পলাশ। আর উৎসুক দৃষ্টিতে নির্মাণকাজ দেখছিলেন পথচারী দুজন। এ সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রশ্ন হচ্ছে কে নেবে এই মৃত্যুর দায়? ঘটনা তদন্ত করে দেখতে হবে কোথাও কারো কোনো অবহেলা ছিল কিনা। এছাড়া আহত-নিহতের পরিবারের পাশেও দাঁড়াতে হবে।  

এ ধরনের মৃত্যু কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। আরো দুঃখজনক হচ্ছে এ ধরনের দুর্ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১২ সালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট জংশনে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের গার্ডার ভেঙে  ১৩ জন নিহত হন। তখন নির্মাণ কাজে নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে রাজধানীজুড়েই রয়েছে অসংখ্য মৃত্যুর ফাঁদ। রাজধানীতে অনেক বড় বড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। ঝড়ে সেগুলো পড়ে গিয়েও পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতিপূর্বে। এখন ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এবং অসংখ্য অবৈধ বিলবোর্ড এখনো রয়ে গেছে। এছাড়া বিদ্যুত, টেলিফোন, ডিশলাইনের তারসহ অসংখ্য তার বিপজ্জনক ভাবে জড়াজড়ি করে আছে রাজধানীজুড়ে। যে কোনো মুহূর্তে এগুলো বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এগুলো দেখভালের কেউ আছে বলে মনে হয় না। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।

নানা দিক থেকেই রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী। পথে পথে এখানে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা। কখন কার যে কিভাবে মৃত্যু হবে কেউ তা বলতে পারবে না। ফুটপাতগুলো দখলে, অধিকাংশ ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, রাস্তার পাশেই ওয়েলডিং কারখানা, নির্মাণ কাজ চলে পথচারীদের জন্য নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা না রেখেই। পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি রাখা হয় রাস্তায়। এ জন্যও ঘটে নানা দুর্ঘটনা।

বলা হয় সবার আগে নিরাপত্তা। কিন্তু পদে পদে সেটি লঙ্ঘন করা হয়। কাউকে কোনো দায় নিতে হয় না বলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। অসতর্কতা ও কর্তব্যকর্মে ঔদাসীন্য কী মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে মালিবাগের মর্মান্তিক ঘটনা। কিন্তু এরপরও কি কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে না?

এইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।