নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন


প্রকাশিত: ০৪:১১ এএম, ০৫ মার্চ ২০১৭

ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বর্তমান ছাত্রনেতৃত্বের ধরন সম্পর্কেও মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ ছাত্রনেতার বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রদের কাছে মিশতে পারে না, তাই ডাকসুর মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে। আর তা না হলে ভবিষ্যতে দেশ নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাবে।  

এ সময় তিনি বলেন আগে আমরা ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার সময় বিভিন্ন ফরম পূরণ করে দিতাম। কারণ তারা যেন আমাদের দলে আসে। কিন্তু এখন ছাত্র নেতারা তা করে না উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আগে ছাত্র রাজনীতি ছিল দেশের কল্যাণের জন্য। কিন্তু এখন ছাত্র রাজনীতি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আদর্শকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়। এর ফলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের লক্ষ্য কি শিক্ষার্থীদের আস্থা সম্মান ও সমর্থন ক্রমান্বয়ে কমছে। তাই এ অবস্থা থেকে ছাত্র রাজনীতি থেকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্ররাজরীতির বাস্তব চিত্রই উঠে এসেছে। গণতন্ত্রমনা মানুষের অন্তরের কথাও যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর বক্তব্যে।

‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছো’র মত গৌরবময় ছাত্র রাজনীতি আজ যেন বিপথে। সাংঘর্ষিক ছাত্র রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা লেগেই আছে। গৌরবময় ইতিহাস থাকলেও ইদানীং যেন পথ হারিয়েছে ছাত্ররাজনীতি। যে কারণে জাতীয় স্বার্থ ত্যাগ করে দলীয় ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থে আত্মকলহে লিপ্ত থাকছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন। লেজুড়বৃত্তিক মানসিকতাও প্রবল। এখন আর ছাত্রদের কল্যাণের জন্য ছাত্ররাজনীতি  নয়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে প্রভাবপ্রতিপত্তি বিস্তারের মাধ্যমে রাতারাতি সম্পদশালী হওয়া, সম্মান, যশ, খ্যাতির দিকে ঝুঁকছে অনেকেই। এ কারণে নিঃস্বার্থপরতা বিদায় নিয়েছে। হল গুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি। সামান্য কারণে রক্তারক্তির মতো ঘটনা ঘটছে।

দীর্ঘদিন ধরে নেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্যও রীতিমত কালচারে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই দলীয় বিবেচনা কাজ করায় ছাত্ররা অনেকক্ষেত্রে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন রণক্ষেত্র না হয়। অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার মধ্যদিয়েই আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। এজন্য শুধু ডাকসু নয় এ ধরনের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঢাবির সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি যে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।