কুম্ভকর্ণের ঘুম কি ভাঙবে?


প্রকাশিত: ০৪:০৪ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

একটি দুঃস্বপ্নের রাত পার করেছিল দেশবাসী ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এই রাত তাদের কাছে কালরাতে পরিণত হয়েছিল। হয়েছিল প্রার্থনার রাত। কোটি মানুষ সারারাত জেগে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের পাশে ছয়শ ফুট গভীর নলকূপের মধ্যে পড়ে যাওয়া শিশু জিহাদকে উদ্ধার চেষ্টার সরাসরি সম্প্রচারিত দৃশ্য দেখেছিলেন টেলিভিশনের সামনে বসে। সারারাত জিহাদের জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষ হাত তুলে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিহাদকে বাঁচানো যায়নি।

শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির একটি পানির পাম্পে লোহার পাইপ দিয়ে কূপ খনন করা হয়। কূপটি নিরাপদ না করে মুখ খোলা অবস্থায় দীর্ঘদিন পরিত্যক্তভাবে ফেলে রাখা হয়। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর জিহাদ কূপের পাশে খেলার সময় পাইপে পড়ে মারা যায়। এ ঘটনায় জিহাদের বাবা নাসির ফকির ‘দায়িত্বে অবহেলায়’ মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসআর হাউসের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম, রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জাফর আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী দীপক কুমার ভৌমিককে আসামি করা হয়।

গতকাল রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।রায়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামসহ ৪ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই আসামিদের ২ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।এছাড়া মামলার দুই আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার  ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। এই রায় নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সকল আইনি ধাপ শেষ করে যাতে রায় বলবৎ থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এটি অত্যন্ত জরুরি।
 
নানা দিক থেকেই রাজধানী শহর বসবাসের অনুপযোগী। পথে পথে এখানে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা। কখন কার যে কিভাবে মৃত্যু হবে কেউ তা বলতে পারবে না। ফুটপাতগুলো দখলে, অধিকাংশ ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, রাস্তার পাশেই ওয়েলডিং কারখানা, নির্মাণ কাজ চলে পথচারীদের জন্য নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা না রেখেই। পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি রাখা হয় রাস্তায়। বিশেষ করে শিশুবান্ধব করে এই শহর কে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এখানে খেলার মাঠ নেই। হাঁটার পথ নেই। এভাবে আর কতোদিন? আর কোনো জিহাদকে যেন এভাবে চলে যেতে না হয় তার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মধ্যেই কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম কি ভাঙবে?

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।