জনপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে কমিশনকে


প্রকাশিত: ০৬:২১ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবশেষে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হল।আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। অন্য চারজন কমিশনার হচ্ছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন আমলা, একজন জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তা আর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। এই প্রথম একজন নারী কমিশনারও পেল জাতি। নতুন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কর্তৃক সার্চ কমিটির মাধ্যমে যেভাবে স্বচ্ছতার সাথে কমিটি গঠন করা হয়েছে এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।  

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারস্পরিক অবিশ্বাসের মূলে রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা। এ থেকে উত্তরণের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সবার আস্থাভাজন একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। মূলত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটেই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়টি সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে যে তারা সক্ষম- এর প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে এরই মধ্যে একটি গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই এই পরিবর্তনের শুরু। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আগের মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে দলবল নিয়ে এখন আর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন না। জনসভা, মিছিল-মিটিং, নির্বাচনী প্রচারণার কাজে মাইক ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। প্রার্থীরা নির্ধারিত মাপ ও রঙের বাইরে পোস্টার করতে পারছেন না। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে এমপি, মন্ত্রী কিংবা এ ধরনের পদাধিকারীদের অংশগ্রহণেও বিধিনিষেধ রয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের ব্যাপারেও কমিশন সীমা বেঁধে দিয়েছে। নির্বাচনের পর প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাবও দিতে হচ্ছে কমিশনে। এর ব্যত্যয় হলে কমিশন ব্যবস্থাও নিচ্ছে। প্রত্যেক ভোটারের আইডি কার্ড থাকায় জাল ভোট প্রতিরোধ করাও এখন সহজ হয়েছে।

পঞ্চম সংশোধনী পাস হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। সেজন্যই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সরকার, বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর নির্বাচন কমিশন যেন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে- সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, নিজস্ব ভবন, আলাদা সচিবালয়সহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতেও আরো গুণগত পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্টদের উচিত কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া। নির্বাচন কমিশনকেও জনপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।