দলীয় কোন্দলের বলি আর কত?


প্রকাশিত: ০৪:০৫ এএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় অন্তর্কোন্দল ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে। এমনকি এই কোন্দল অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতি পর্যন্ত হচ্ছে। সবশেষ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় আলোচনা চলছে সর্বত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই লাগাম টেনে না ধরলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তখন তা নিয়ন্ত্রণের একেবারেই বাইরে চলে যাবে।  

সাংবাদিক, পথচারী কেউ বাদ যাচ্ছে না কোন্দলের বলি থেকে। গত ৩১ ডিসেম্বর খুলনায় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ অন্য পক্ষের এক নেতাকে গুলি করলে সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এক পথচারী নারী মারা যান। গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সময় দৈনিক সমকাল পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল হাকিম গুলিবিদ্ধ হন। শুক্রবার ঢাকায় আনার পথে তিনি মারা যান। প্রশ্ন হচ্ছে এই মৃত্যুর জবাব কী, কে নেবে এই হত্যার দায়?

সহযোগী একটি দৈনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৩টি, নিহত হয়েছেন ১ জন, আহত ১৯০ জন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি, নিহত হয়েছেন ১৭ জন, আহত ১ হাজার ৫২ জন। ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ, যুবলীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মোট ৩৫টি, মারা গেছেন ৪ জন, আহত হয়েছেন ২০৬ জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

আওয়ামী লীগের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের এমন প্রাণঘাতী অন্তর্দ্বন্দ্ব একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি খারাপ বার্তা দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রাচীন গণতান্ত্রিক একটি দলের নেতাকর্মীরা এভাবে দলীয় কোন্দলে লিপ্ত হবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই অপতৎপরতা এখনই শক্তহাতে দমন না করলে দলকেও বড় মাশুল দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দলীয় কোন্দল। এতে দলের ভাবমূর্তিও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে একটি প্রবণতা আছে, সেটি হচ্ছে সব সময় সরকারি দলে থাকা কিছু লোক থাকে। এরাও নানা সমস্যা করছে। দলীয় হীন স্বার্থেও অনেকে গ্রুপিংলবিংয়ে যুক্ত হয়ে কোন্দল বাড়াচ্ছে। এতে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা হচ্ছে না। অনুপ্রবেশকারী আর হাইব্রিডদের কাছ থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। দলীয়ভাবে সেটা তো করতেই হবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।