কিশোর অপরাধীর দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন
এটা খুবই উদ্বেগজনক খবর যে দেশে কিশোর অপরাধ বাড়ছে। অবস্থা এমন হয়েছে খুনখারাবির মত ঘটনাও ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করা হচ্ছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত সর্বত্র একই অবস্থা। বরিশাল নগরের একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র সাইয়েদুর রহমান হৃদয় গত শনিবার সকালে দাঁড়িয়ে ছিল স্কুলের মাঠে। কথা আছে বলে সেখান থেকে তাকে ডেকে নেয় কয়েকজন তরুণ। একটু দূরে নিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে যায় তার সহপাঠী গোলাম সাজিদ রাফি। ছুরিকাঘাত করা হয় তাকেও। দুজনকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে নিয়ে গেলে হৃদয়কে (১৫) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। হৃদয় ও রাফি দুজনই মহানগরীর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। নিহত হৃদয়ের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। আরেক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হৃদয়ের সঙ্গে সম্প্রতি কয়েকজন বখাটের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরেই এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বরিশাল মহানগরেও গত ছয় মাসে এ ধরনের প্রায় ১৫টি ঘটনা ঘটেছে। যদিও খুনের ঘটনা এটাই প্রথম। বখে যাওয়া কিশোর অপরাধীরা হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এমনকি টাকা পেলে যে কাউকে হত্যা করতে দ্বিধা করে না তারা। পাড়া-মহল্লায় গ্রুপ বেঁধে চলাফেরা করে এরা। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় লিপ্ত থাকে। স্কুল-কলেজের মেয়েদের দেখলেই নানাভাবে হয়রানি করে। এ অবস্থার অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কিশোর এসব অপরাধীর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিপথগামী এসব কিশোরদের যদি এখনই ফেরানো না যায় তাহলে এর চরম মূল্য দিতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালের এসব কিশোরদের হিতাহিত জ্ঞান খুব একটা কাজ করে না। অনেক ক্ষেত্রে এরা পারিবারিক সান্নিধ্য থেকেও বঞ্চিত হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ও পেয়ে থাকে এরা। ফলে হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে। সমাজকে অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে হবে। পারিবারিক বন্ধন, নৈতিক শিক্ষা, অনুশাসনও এদের বিপথ থেকে ফেরাতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কী করে, কার সাথে মেশে- এটা নজরদারিতে রাখলে অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
এইচআর/এমএস