প্রত্যেকে মোরা পরের তরে…


প্রকাশিত: ০৩:৫৬ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

নিজের জীবন দিয়ে মানবসেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রেল কর্মচারী বাদল মিয়া (৫৮)। চারদিকে যখন নানা নেতিবাচক খবর তখন বাদল মিয়াদের এই আত্মত্যাগ সমাজকে নতুন দিশা দিবে। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে এই মানবহিতৈষী বাদল মিয়ার আত্মদানকে স্মরণ করছি। তার শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি গত শুক্রবারের। তখন বেলা আনুমানিক ১টা। একটি ট্রেন ছুটে আসছে দ্রুত বেগে। ছোট্ট এক শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এক মা রেললাইন পার হচ্ছিলেন। কিন্তু রেল খুব কাছে এসে গেলেও শিশুটিকে নিয়ে তার মা রাস্তা পার হতে পারছিলেন না। রেললাইনের পাশ থেকে এক ব্যক্তি ওই মাকে সরিয়ে নিলেও রেললাইনের ওপর রয়ে গেল শিশুটি।  এই দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারলেন না পাশের রেললাইনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রেল কর্মচারী বাদল মিয়া (৫৮)। দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। কিন্তু বাদল নিজে সরার সময় পেলেন না। ফলে ট্রেনের ধাক্কায় মুহূর্তেই জীবন প্রদীপ নিভে গেল তার। সৃষ্টি হল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের রেলগেটে গত শুক্রবারের এ ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছে। দায়িত্বশীলরা যেখানে হরহামেশা দায়িত্বে অবহেলা করছেন সেখানে সমাজের চোখে অতি সাধারণ এক মানুষ দেখিয়ে দিলেন মানবিকতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। প্রায় ২৯ বছর ধরে রেলওয়েতে কাজ করতেন বাদল। ৮-১০ বছর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চাকরি করার পর তার চাকরি স্থায়ী হয়। তিনি আট সন্তানের জনক। তার আয় দিয়েই পুরো পরিবার চলত। এ অবস্থায় এই ঘটনাটি পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দিল।
 
নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মানবসেবার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাদলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক দায়িত্ব। সমাজে যারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তাদের পাশে না দাঁড়ালে সমাজে এ ধরনের মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। ভালো কাজের প্রশংসা ও পুরস্কার ছাড়া সমাজে ভালো কিছু আশা করা বৃথা। আমরা চাই পরের তরে জীবনদানকারী বাদলের পরিবার যেন কোনো অনিশ্চয়তার মধ্যে না পড়ে। ভবিষ্যতে সমাজে বাদলদের মতো নিঃস্বার্থ পরোপকারী, মানবহিতৈষীর সংখ্যা বাড়ানোর  জন্যই এটা অত্যন্ত জরুরি। কবির ভাষায় বলতে হয়-“ আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/ আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,/ সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ”। এই মানবিক বোধ সবার মধ্যে জেগে উঠুক।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।