একজন পিতার অসহায়ত্ব ও মানবিকতার দায়


প্রকাশিত: ০৪:২০ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

একজন পিতার অসহায়ত্ব কোন পর্যায়ে গেলে তিনি নিজ সন্তানের মৃত্যু চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন তা একবার ভাবা যায়। এই অভাবনীয় কাজটিই করেছেন মেহেরপুর শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন। তবে একান্ত বাধ্য হয়ে। ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তার পরিবারের তিন সদস্য। যার ওষুধ বিশ্বে এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে হারিয়েছেন জমিজমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নগদ অর্থ। সবকিছু হারিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে ও এক নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন তিনি। তোফাজ্জেল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার দুপুরে তার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। তিনি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের কিছু ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন। বিষয়টি অত্যন্ত  হৃদয় বিদারক, আবেদনটি পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি জেলা প্রশাসক।এই পরিবারের জন্য তিনি সাধ্য মতো চেষ্টা করবেন, সমাজের সকলকেই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।

চিকিৎসকদের মতে,  ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি একটি জিনগত রোগ। ছেলেদের ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে এই রোগ দেখা দিতে পারে। প্রথমে ভর দিয়ে হাঁটতে পারবে না। উপরে উঠতে পারে না। শরীরের মাংসপেশিগুলো নিস্তেজ হয়ে আস্তে আস্তে পঙ্গু হয়ে যায়। ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে মারা যেতে পারে। এ রোগের প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।  

বাংলাদেশে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। তোফাজ্জেল হোসেনের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বিদেশে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সম্ভব নয়। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা, সর্বোপরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থেও তাদের পাশে সংশ্লিষ্টদের দাঁড়ানো উচিত। একটি মানবিক রাষ্ট্র কখনো এই ধরনের বিরল রোগে আক্রান্ত তার নাগরিকদের অবহেলায় ফেলে রাখতে পারে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি দেখতে পারে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে পারেন।

আমরা আশা করবো দরিদ্র পরিবারের এই অসহায় মানুষগুলোর চিকিৎসার স্বার্থে সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন।চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও আমাদের বিশ্বাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জটিল-কঠিন হিসাব শেষে জয় হোক মানবতার। মানুষের।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।