মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার দিন


প্রকাশিত: ০৬:৪৬ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

এটা খুবই আশাব্যঞ্জক খবর যে দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের জন্য। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের অন্যতম জনশক্তি আমদানিকারক দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। অনেকদিন শ্রমিক নেয়া বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ একটি বড় শ্রমবাজার হারাচ্ছিল। অবশেষে দরজা খুলে গেল। এখন দুই দেশকেই এ ব্যাপারে আন্তরিকতা নিয়ে এগোতে হবে। কোনো কারণে যেন আবার এটি বন্ধ হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন এর সঙ্গে দুই দেশের আন্তঃসম্পর্কও অনেকটা নির্ভরশীল।

গতকাল  শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) মালয়েশিয়া সফরে থাকা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মোচনের খবরটি জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি এর বিশেষ সম্মেলনে যোগদান শেষে শ্রমবাজার ইস্যু নিয়ে দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর তিনি এ ঘোষণা দেন।  এ সপ্তাহ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে ছয় হাজার শ্রমিকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে এ মাসেই আরও ৫০ হাজার শ্রমিকের কাগজপত্র সত্যায়ন হবে। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ থেকে যত জনশক্তি রফতানি হয়েছে এ বছর (২০১৭) শুধু মালয়েশিয়াতেই তার চেয়ে বেশি শ্রমিক রফতানি হবে-এমন কথাও বলেন মন্ত্রী। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক খবর। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই হবে সমীচিন। বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে বেশি করে মালয়েশিয়ায় যেতে পারে, অগ্রাধিকার পায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এর আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্লান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছিল। এখাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ায় জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন ও নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হবার আগেই  সেই চুক্তি স্থগিত করে মালয়েশিয়া। যেটা ছিল খুবই দুঃখজনক।  

এ ধরনের পরিস্থিতি কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। সভ্যতার ইতিহাস অভিবাসনের ইতিহাস। যেখানে প্রয়োজন আছে মানুষ সেখানে যাবে। এ জন্য  কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। মালয়েশিয়ারও কর্মী প্রয়োজন। বাংলাদেশেরও কর্মী পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দু`টি দেশকেই সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে, নানা শর্তের বেড়াজালে কর্মীদের আটকে দিলে সেটা আসলে কারো জন্যই ফলদায়ক হবে না। এ জন্য বাস্তবসম্মত পথে হাঁটতে হবে। মালয়েশিয়া এ ব্যাপারে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির প্রবাহ ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকেও নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মীরা রয়েছে। সেখানে চলছে অস্থিরতা। এই অবস্থায় জনশক্তি রপ্তানি খাতে ধস নামার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী যাতে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা সৃষ্টি করা যায় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা যেন কোনো ধরনের প্রতারণা বা দুর্ভোগের শিকার না হন নিশ্চিত করতে হবে সেটিও।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।