হকার উচ্ছেদের ইঁদুর-পুলিশ খেলা বন্ধ হোক


প্রকাশিত: ০৩:৫০ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

গুলিস্তান-পল্টন এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে গিয়ে হকারদের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন বলছেন, যে কোনো মূল্যে ফূটপাথ দখলমুক্ত করা হবে। অন্যদিকে হকারদের দাবি, পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাবে না। কখনো কখনো উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্খিত। একদিকে উচ্ছেদ চলে আবার দুদিন পরই একই চিত্র। এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঢাকার ফুটপাথগুলো দখলে থাকায় ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের  ওপর বিষফোড়া। সাধারণত হকাররাই ফুটপাথগুলো দখল করে রাখে। এজন্য ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত রাখা দরকার। কিন্তু ফুটপাথে হকারদের বসা না বসা নিয়ে নানা রকম মত রয়েছে। কেউ বলছেন, ছিন্নমূল এসব মানুষজনকে যদি ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদ করা হয় সেটা হবে তাদের রুটিরুজির ওপর হস্তক্ষেপ। তাই স্থায়ী পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ হবে সম্পূর্ণ অমানবিক। বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার সমিতির তথ্য অনুসারে বর্তমানে ঢাকা শহরে  ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি হকার রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার স্থায়ী এবং ৬০ হাজার অস্থায়ী।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহায়সম্বলহীন এসব মানুষ ঢাকা শহরে এসে কাজের সন্ধানে হকার পেশায় যুক্ত হয়ে পড়ে। সামান্য পুঁজিতে ফুটপাথে বসে যে কোনো ধরনের ছোটখাটো ব্যবসা করা যায়। ঐ দিয়েই একেকজনের আয়ে ৩/৪ জনের একটিসংসার চলে। প্রায় দেড়কোটি মানুষের বসবাসের এই নগরী আসলে এক বিশাল বাজার। এই বাজারে অন্তত ২৫% অর্থনীতি পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হয় এই হকারদের মাধ্যমে। হকারদের কাছ থেকে সস্তায় জিনিসপত্র কেনা যায়। ফলে এই উচ্চমূল্যের বাজারে মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্তের লোকজন কেনাকাটার জন্য হকারদের ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে হকারদের উচ্ছেদের  ব্যাপারটি আসলে একপাক্ষিক কোনো ব্যাপার না। তাদের উচ্ছেদ করলে কোথায় গিয়ে তারা দাঁড়াবে, এই বিষয়টি ও অবশ্যই ভাবতে হবে। এছাড়া যানজট সৃষ্টির জন্য হকারদের দায়ী করা হলেও তারা আসলে এজন্য কতটা দায়ী সেটিও ভেবে দেখতে হবে। তবে হকাররা স্রোতের মতো  আসতে থাকবে আর ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাবে-দিনের পর দিন এ অবস্থায়ও চলতে পারে না।  

ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ রাস্তার সঙ্কট। ঢাকায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ ভাগ রাস্তা দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ ভাগ। মেইন রোড আছে ৩ ভাগ। এই ৩ ভাগের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকার। রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাথ প্রাইভেট গাড়ি দখল করে রেখেছে। ভাবতে অবাক লাগে রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার পাশেই যেসব দোকান ও আবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও এগুলো দেখার কেউ নেই। যত দোষ কেবল যেন ওই নন্দ ঘোষ হকারদের।

রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে কেবল হকার উচ্ছেদ নয়, ভাবতে হবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও। আমরা চাই হকার সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হোক।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।