শিক্ষকদের পেনশনের জন্য আমৃত্যু অপেক্ষা কেন?


প্রকাশিত: ০৪:১৬ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা আছেন অন্তহীন দুঃখ-কষ্টে। সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো তাদেরও স্বপ্ন ছিল অবসর জীবনে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে বেঁচে থাকার। গ্রামগঞ্জে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চাকুরি করে আসা এ সকল সম্মানিত শিক্ষকরা জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। শিক্ষকতা জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পেনশনের টাকা না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে তাদের দিন কাটছে।

একদিকে রোগ-ব্যাধি অন্যদিকে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ তাদের জন্য বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অনেকে মৃত্যুপথযাত্রী। বয়সের কারণে তাদের নুতুন করে জীবন শুরুরও সক্ষমতা নেই। চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের বছরের-পর-বছর পেরিয়ে গেলেও পেনশনের অর্থ না পেয়ে তাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অমানবিক হয়ে উঠছে। যারা আমাদের জাতির আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করেছেন তাদেরকে যথাসময়ে অবসর সুবিধার অর্থ দিতে না পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। মাঝে মাঝে অনেক বেদনাদায়ক খবর আমাদেরকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলে। অবসর সুবিধার অর্থের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে অনেকে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। যা আমাদের জীবনে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

সারাদেশে ৭৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী তাদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্য আবেদন করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ডে ৪৫ হাজার এবং কল্যাণ ট্রাস্টে ৩০ হাজার আবেদন রয়েছে। অর্থের অভাবে তাদের টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের অবসর সুবিধা পরিশোধের উদ্যোগ না নেয়ায় আবেদনের পাহাড় জমেছে। এ দুই প্রতিষ্ঠানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরের পর বছর একই চেয়ারে বসে অবসরে যাওয়া সম্মানিত শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। যে কারণে তারা বছর-বছর ঘুরেও টাকা পান না। অল্প কিছু শিক্ষকের অবসর সুবিধা দেয়া হলেও ঘুষ ছাড়া চেক মেলে না।

ইতোমধ্যে সরকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনশনের অর্থ পরিশোধের জন্য চলতি অর্থ বছরে ৫০০ কোটি টাকা সিডমানি এবং ১৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ। সব শিক্ষকের পেনশনের অর্থ পরিশোধ করতে বর্তমানে আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অবসর বোর্ডে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ, এফডিআর এবং মুনাফাসহ সংগৃহীত ১৪২ কোটি টাকা দিয়ে ১০-১২ হাজার এবং কল্যাণ ট্রাস্টে বিশেষ বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ২ হাজার শিক্ষককে পেনশনের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তাহলে অবসর বোর্ডে আবেদনকারী অবশিষ্ট ৩৩ হাজার এবং কল্যাণ ট্রাস্টে ২৮ হাজার শিক্ষকের পেনশনের কি হবে? অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেঁচে থাকা দিন দিন অসহনীয় ও মানবিকতাহীন হয়ে উঠছে। পেনশনের জন্য আমৃত্যু অপেক্ষা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে শিক্ষকরা কেন অবহেলিত থাকবে? সরকার কে উদ্যোগ নিতে হবে আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তাদের পেনশনের অর্থ পরিশোধ করার। জীবনের শেষ সময়ে এসে জাতির বাতিঘর হিসেবে পরিচিত এ  সকল শিক্ষকদের সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে।

সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। যা এবারের জাতীয়  বেতন স্কেলে প্রতিফলিত হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ থাকলেও তারা অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে জাতি গঠনের মতো গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু যারা দেশ ও জাতিকে আলোর পথ দেখিয়ে সমৃদ্ধির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন এ সকল সম্মানিত শিক্ষকদের অবসর সুবিধার অর্থ দিতে না পারা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কতটা লজ্জার, অসম্মানের এবং বেদনার তা কি কখনো ভেবে দেখা হয়েছে? বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার অর্থের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা কখনও কাম্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াই হবে সমীচীন।  

লেখক :  সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।