দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন : আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করুন


প্রকাশিত: ০৪:০৫ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

চিকিৎসা একটি মহান পেশা। সেজন্য চিকিৎসকদের দায়িত্বশীলতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সামান্য অবহেলা, অসচেতনতা কিংবা দায়িত্বহীনতা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক পরিণতি। তাই চিকিৎসাসেবার প্রতিটি স্তরে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে চিকিৎসকরা যে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন)  লেখে থাকেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে দুর্বোধ্য। এ কারণে ওষুধের নাম ঠিকমত পড়তে না পারায় ভুল ওষুধ দেন দোকানদাররা। এতে রোগ সারার বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই বাস্তবতায়ই চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) পড়ার উপযোগী ও স্পষ্ট এবং বড় অক্ষরে কম্পিউটার মুদ্রণের মাধ্যমে লেখার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে সার্কুলার জারি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  গত সোমবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে এই সার্কুলার জারির বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর ‘দুর্বোধ্য ব্যবস্থাপত্র: ভুল ওষুধ গ্রহণের ঝুঁকিতে রোগীরা’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালত এই আদেশ দেন।  হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী। জনস্বার্থ রক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এছাড়া চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম (ওষুধের মূল কেমিক্যাল কম্পোজিশনের নাম) না লিখে ব্র্যান্ডের নাম লিখে থাকেন। এতে পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের নাম লেখার সুযোগ থাকে। অভিযোগ আছে, ওষুধের মান যাই হোক কমিশন বাণিজ্যের অনৈতিক লোভে অনেক চিকিৎসক তাদের পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের নাম লেখেন ব্যবস্থাপত্রে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন রোগীরা। উচ্চদাম দিয়েও নিন্মমানের ওষুধ কিনতে বাধ্য হন মানুষজন। চিকিৎসকদের এ ধরনের অনৈতিক প্রবণতা বন্ধে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাতে পছন্দের কোম্পানির ওষুধের নাম লেখার আর সুযোগ থাকবে না। এজন্য প্রয়োজনে আইন করতে হবে। এবং তা দ্রুত।   

দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু গোড়ায় গলদ রেখে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া যাবে না। সেজন্য আদালতের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে জনস্বার্থে অনেক নির্দেশনা এলেও সেগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে এমনটি জোর দিয়ে বলা যাবে না। তাই জনস্বাস্থ্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।