পাঠ্যপুস্তক নিয়ে তুঘলকি কারবার!


প্রকাশিত: ০৩:৪১ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

লেখায় ভুল থাকা, পাঠ্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক, ছাপা ও আঁকার মান খারাপ, নিন্মমানের কাগজ, সময়মতো বই না পৌঁছানো-এসব নানা অভিযোগ প্রমাণ করে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার। অথচ প্রতি বছর ১ জানুয়ারি ঘটা করে বই উৎসব পালন করা হয়। এবারো হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ এলাকার স্কুলে এখনো বই পৌঁছেনি। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু  নানা স্তরে গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, লোভী মানসিতার কারণে বিশাল কর্মযজ্ঞের আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।

সহযোগী একটি দৈনিকের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, উৎসবের এক সপ্তাহ পেরুলেও এখনও বিদেশে ছাপানো প্রাথমিক স্তরের ৪৭ লাখ বই বিদ্যালয়ে পৌঁছেনি। ভারতের শীর্ষাসাই বিজনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান মুম্বাই ও পুনেতে ৪৭ লাখ বই ছাপার কাজ করে, যা প্রাথমিকের মোট বইয়ের প্রায় ৪ শতাংশ। দরপত্র অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বই পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু সময়মতো এই সব বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। এসব বই কোথায় আছে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য মোট ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই ছাপানোর কথা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপিয়েছেন দেশীয় মুদ্রাকররা। আর প্রাথমিক স্তরের ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি বই ছাপানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে, দেশে-বিদেশে। দেশের পাশাপাশি এবার ভারত ও চীনে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে।

এ ছাড়া দেশি মুদ্রাকরদের অনেকেও সময়মতো বই সরবরাহ করতে পারেননি, এ জন্য ৭২টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করায় বিল আটকে দেওয়া হয়েছে চারটি কাগজকলের। এ ছাড়া দরপত্র অনুযায়ী সময়মতো বই ছাপিয়ে না দেওয়ার কারণে ৭২টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। দেশীয় এসব মুদ্রাকর মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপিয়ে দিয়েছেন। এসবের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি ও অসংগতি নিয়ে সমালোচিত হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানটি জোড়াতালি দিয়ে সব পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে দেশি প্রতিষ্ঠান সরকার প্রিন্টার্স সময়মতো বই দিতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৯ লাখ বই দিতে পারেনি। নামে-বেনামে ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ বই ছাপার কাজ নিয়েছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান ৪০ লাখ বই দিতে পারেনি। বিভিন্ন জেলার আপৎকালীন মজুদ থেকে বই পাঠিয়ে দেশের কিছু এলাকায় পাঠ্যপুস্তক উৎসব করা হয়েছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় প্রাথমিক স্তরের শিশুরা সব বই পায়নি। বই ছাপার জন্য তারা বিভিন্ন পেপার মিল থেকে কাগজ কেনে। কিন্তু এবার ম্যাপ, আল নুর, হাক্কানি ও গাজীপুর পেপার মিল নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ ছিল নিম্নমানের। কাগজের উজ্জ্বলতা (ব্রাইটনেস) কম ছিল। আকারে ছিল ছোট এবং পুরুত্ব কম ছিল। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬ কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে।

বিনামূল্যে কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ মামুলি কোনো বিষয় নয়। সরকার এক বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করছে। কিন্তু পাঠ্য বইয়ে ভুলভ্রান্তিসহ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের কারণে অনেক  অর্জনই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলভ্রান্তি নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠছে তা ক্ষতিয়ে দেখে সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কাদের কারণে এ ধরনের ভুল হল তাদেরও কাঠগড়ায় তুলতে হবে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। যেসব প্রতিষ্ঠান বই দিতে দেরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে কালোতালিকাভুক্ত করতে হবে। এখনো যেসব এলাকার স্কুলে বই পৌঁছেনি দ্রুত সেখানে বই পাঠাতে হবে। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সার্বিকভাবে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার মানোন্ননের স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই। গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বইয়ে ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এবারের মতো ভুল কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এর পেছনে যদি কোনো চক্রান্তকারী থেকে থাকে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। চক্রান্তকারীকে খুঁজে বের করা হবে। আশা করি শুধু কথায় নয় কার্যক্ষেত্রেও এর প্রমাণ দেখা যাবে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।