প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড গঠন সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
কিছুদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা, অধিকার, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। যখন গোটা বিশ্ব অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অভিবাসীর সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সে সময়েই প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্ববাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের ৭ দিনের মাথায় ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে “প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড” গঠনের ঘোষণা দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর মন্ত্রীর এ ঘোষণায় আনান্দে উদ্বেলিত ১ কোটি প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবার। অভিনন্দন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে।
বর্তমানে বিশ্বের ১৬১ টি দেশে কর্মরত ১ কোটির অধিক বাংলাদেশি কর্মী এবং দেশে তাদের পরিবারের প্রায় ৪ কোটি সদস্যের কল্যাণে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়নি। অথচ তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান ১৩%।
সরকার প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে ১৯৯০ সালে কল্যাণ তহবিল সৃষ্টি করে। যা ২০১৪ সালে প্রশাসনিক আদেশে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড করা হয়। বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা হয় প্রবাসীদের কল্যাণে। স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরলস প্রচেষ্টায় বিপুল পরিমাণ প্রবাসী কর্মীর কল্যাণ নিশ্চিতকরণে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অধিকাংশ কাজ কর্মীর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে।
বহির্গমন অধ্যাদেশ ১৯৮২ বাতিল করে ২০১৩ সালে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন করা হয়। এ আইনেও তাদের কল্যাণের বিষয়টি রাখা হয়নি। কোন আইন না থাকা স্বত্ত্বেও বিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানে ইতোমধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনমানের উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেমন- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রবাসী পল্লী (আবাসন), বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি, প্রত্যাগত কর্মীদের সামাজিক পুনর্বাসন, ডায়াসপোরা প্রবাসীদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেইজে অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রবাসে মৃত কর্মীর পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। কিন্তু আইন না থাকা এবং জনবল স্বল্পতাই এ সকল কার্যক্রম থমকে দাঁড়াচ্ছে।
সার্বিক প্রেক্ষাপটে অভিবাসীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় বিশ্ববাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের কয়েক দিনের মধ্যেই “প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড” গঠনে সরকারের উপলব্ধি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আশার আলো জাগিয়েছে ১ কোটি প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের ৪ কোটি সদস্যদের মধ্যে।
ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী আইন প্রণয়নের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমাদের আশা, সরকার খুব দ্রুত “প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড” গঠন করে তাদের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করতে সক্ষম হবে।
লেখক : সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
এইচআর/এমএস