প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের কী কী কল্যাণ করে?


প্রকাশিত: ০৬:৩১ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

জীবনের জন্যে, জীবিকার জন্যে নিজ দেশ ছেড়ে পরের দেশে প্রবাসী হয়ে থাকার নামই তো অভিবাসী। প্রধানত জীবিকার জন্যই আমরা বাংলাদেশিরা অভিবাসী হলেও অনেকে ভিন্ন ভিন্ন কারণেও অভিবাসী হয়।

প্রবাসীদের সমস্যার অন্ত নেই, বিশেষ করে অবৈধদের। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া হয়ে যাওয়া অভিবাসীদের। জীবিকার জন্যে এসে কারণে অকারণে অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হওয়া প্রবাসীদের দেখলে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। বেকার হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা পারে না দেশে ফিরে যেতে, আবার বিদেশে শারীরিক পরিশ্রম করেও মনে শান্তি থাকে না বৈধ ভিসা-পাসপোর্ট না থাকার কারণে।

বৈধদেরও অভিযোগের কমতি থাকে না। ভাই, এক মাসের জায়গায় দুই মাস/তিন মাসেও পাসপোর্ট পাচ্ছি না, মালয়েশিয়ায় কেউ কেউ চট্টগ্রামের মানুষ বলে বেশি হয়রানির শিকার হয় নাকি হাই কমিশনে গিয়ে। শুনি আর বলি,ভাই-হাই কমিশনে কয়জন কর্মকর্তা আছেন, আমাদের এতো গুলো প্রবাসীকে সঠিকভাবে সেবা দিবেন। আমরা তো প্রবাসী বেশি হাই কমিশনে কর্মকর্তা কম। বিভিন্ন ভাবে কথা বলে অনেক সময় নিজেও এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি সতীর্থ অভিবাসী ভাইদের অভিযোগ।

সতীর্থ অভিবাসীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা আমার এই কম-জোর কলমে যা পারি তা তো লিখে যায়,কাজ হোক বা না-হোক। কিন্তু, শনিবারে অনলাইলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে আমার অনুভূতি অভিবাসীদের সঠিক কোন অভিবাবকই নেই। সব সময় প্রবাসীদের মুখে শুনি প্রধান দুই সমস্যার কথা ঢাকা এয়ারপোর্টে হয়রানি ও হাই কমিশন বা দূতাবাসে হয়রানির কথা।

গত শনিবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানালেন, বিমানবন্দর বিমান মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে আর হাই কমিশন পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। যা সত্য তা-ই বলেছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে `প্রবাসীকল্যাণ` শব্দটা কেনো? বৈদেশে কর্মসংস্থানের খোঁজ আর শ্রমিক প্রেরণ ছাড়া অভিবাসীদের কী কী কল্যাণ করে `প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়` তা জানতে চাই আজ অভিবাসী দিবসে। আমাদের জানিয়ে দিন কোন সমস্যার কোন মন্ত্রণালয়ে গেলে সমাধান পাব। কোন অভিযোগ কোথায় গিয়ে করবো। আমরা অভিবাসীরা তো প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আমাদের কল্যাণের মন্ত্রণালয় বলে ধারণা করে বসে আছি।

কিছুদিন আগে ইউটিউবে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের এক বক্তব্য নাকি টকশো শুনেছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি দেখলেন পানির সমস্যা সমাধান করা তার কাজ নয়, ট্রাফিকজ্যাম নিরসন তার কাজ নয়, ঢাকা শহরের এ রকম প্রধান প্রধান অনেক সমস্যাই সিটি কর্পোরেশনের কাজ নয় বা এতে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বভার নেই, যে সব সমস্যা সমাধান না-করলে নগরী সুন্দর হবে না,বাসযোগ্য হবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে মেয়রের কাছে নাগরিকের প্রত্যাশা আর মেয়রের কাজের পরিধির মধ্যে বিরাট তফাৎ। এখন মনে হচ্ছে আমরা অভিবাসীদেরও একই অবস্থা, অভিবাসীদের একেক সমস্যা একেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসীদের জন্যে বা প্রবাসীদের জন্যে কী কী কল্যাণ করেন তা আবারো জানতে চেয়ে শেষ করছি। এটা জানা থাকলে সতীর্থ অভিবাসী ভাইদের জানাতে পারবো।

আর হ্যাঁ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের `উন্নয়নের মহাসড়কে, অভিবাসীরা সবার আগে’ শ্লোগানটি মনে ধরেছে, ভালো লেগেছে। এতে অভিবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি আছে। সুন্দর এ শ্লোগানের জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ।

লেখক : মালয়েশিয়া প্রবাসী।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।