ডেঙ্গুর প্রকোপ বন্ধে ব্যবস্থা নিন


প্রকাশিত: ০৬:২১ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬

রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক। রাজধানীর সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিদিনই ভিড় করছে ডেঙ্গু রোগীরা। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কেনো বিকল্প নেই।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে এডিশ মশাবাহী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৩। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৬২। এর আগে ২০০৬ সালে ২ হাজার ২০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৭৪৯। এই হিসাবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। যথাযথ সরকারি উদ্যোগ না থাকায় এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এই মশার কামড় খেয়েই লোকজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য এডিস মশা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

সাধারণত প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।  কিন্তু এ বছর বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় শীতের আগমের প্রাক্কালেও এডিশ মশা বংশ বিস্তার করছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এই সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।  ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সময় রক্তক্ষরণে ভুগে থাকে। এছাড়া আক্রান্তরা পিঠ, দাঁত, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভব করে। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি না হলে তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার আগে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ারও দরকার নেই। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে সচেতনতার কথাও বলেন। বিশেষ করে রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। এডিস মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য দিনের বেলায়ও ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত।

বাসায় খোলা পাত্রে জমে থামা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি, টায়ারের খোল, ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা অথবা পানির চৌবাচ্চায় এই মশা নির্বিচারে বংশ বিস্তার করে। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ছেড়ে ছেড়ে আসা বৃষ্টির কারণেও এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে এবং সে কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ১০২ ডিগ্রি ও এরচেয়ে বেশি জ্বর, সঙ্গেই তীব্র মাথা ও শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ে, তীব্র পেট ব্যথা, স্কিন র্যা শ ইত্যাদির সঙ্গে বমিভাব ও ক্ষুদামন্দা থাকলে তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ অবস্থায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে এন্টিবায়োটিকসহ নানান ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর প্রশমনে কেবল প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি খেলেই চলে। তবে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে।

বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত এক দশকে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে। বিশ্ব জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের দুই ভাগই অর্থাৎ ২৫০ কোটি লোক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ৭০ ভাগই এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বাস করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা হু, সতর্ক করে দিয়েছে, এখনই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে ঢাকার দুই  সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হতে হবে যাতে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়।  এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।