মালয়েশিয়ায় দক্ষ কর্মী পাঠান, রেমিটেন্স বাড়ান


প্রকাশিত: ০৩:৪৩ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতি বছরই আমাদের দেশের  মানুষ পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশে যাচ্ছে কাজ করার জন্য। সারা বছর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নতুন নতুন বৈদেশিক শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয় আমাদের দেশের মানুষের জন্য বা বন্ধ থাকা শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়া আমাদের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার। হিসাব করলে দেখা যাবে, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় মিলে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি কাজ করে। এর ৯০ শতাংশ মানুষ সাধারণ শ্রমিক হিসেবে বিদেশ গিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, সাধারণ শ্রমিক থেকে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হন।

নিজের দক্ষতা প্রমাণ করার জন্য বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশিরা সব দেশেই দক্ষতা প্রমাণ করে তাদের বেতন বাড়াতে সক্ষম হন। তবে অধিক কষ্ট করে সংশ্লিষ্ট কাজ শিখতে হয়, নতুন দেশে ভাষা শিখতে হয়, সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে হয়। এরা দেশ থেকে একেবারে সাধারণ শ্রমিক হিসেবে বিদেশ গিয়ে কঠোর শ্রমে-ঘামে নিজেকে গড়ে তুলে টাকা অর্জন করে দেশে ডলার পাঠাচ্ছে। বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর প্রবাসীর পরিবার চলছে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে। দেশের রেমিটেন্স আয় আরো অনেক বাড়বে, ডলারের রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় যাবে, প্রবাসীর পরিবার আরো বেশি আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে, যদি বিদেশে নতুন শ্রমিক প্রেরণের আগে তাদের দক্ষ না-হোক অন্তত আধা-দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়। যদি গড়ে তোলা যায়, গড়ে তুলতেই হবে। আর কতো শুধু সাধারণ শ্রমিক প্রেরণ করবে দেশ? আর কতো শুধুই অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণ করবে দেশ?

আমাদের দেশের বিশাল তরুণ সমাজ যারা নতুন করে বিদেশ যেতে চায়, তাদের এক বা একাধিক কাজে অন্তত আধা দক্ষতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের, যে রাষ্ট্র রেমিটেন্স পায়। দেশের জেলা-উপজেলায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তুলতে হবে অধিক হারে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য, হাতে-কলমে কাজ শেখার জন্য সারাদেশের তরুণদের বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। টেকনিক্যাল কাজ শেখায় আগ্রহী করে তুলতে হবে তরুণদের।

বাংলাদেশের যতো মানুষ প্রবাসে কাজ করে ফিলিপাইনের এর চেয়ে অনেক কম মানুষ বিদেশে কাজ করে। অথচ, ফিলিপাইন রেমিটেন্স আয় করে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ফিলিপাইন বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ করে দক্ষ বা আধা-দক্ষ। তাই ফিলিপাইনের মানুষ বিদেশ গিয়েই বেশি বেতনের কাজ পায়। আর আমরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও কম বেতন পাই। তাই তো প্রথম বিদেশ গিয়ে টেনশনের অন্ত থাকে না, এতো কম বেতন, কখন শোধ করবো বিদেশ আসার ঋণের টাকা। কোনো কাজ না-জানা শ্রমিককে কতই বা বেতন দিবে।

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষই পরিশ্রমী, অধিকাংশ তরুণ মেধাবী। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেই ভিন দেশে প্রতিকূলতাকে জয় করে অর্থ উপার্জন করে। বিদেশ যাওয়ার আগে যদি কিছু কাজ-কাম শিখিয়ে দেওয়া যায় তারা আরো অধিক অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে যাবে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণে। বিদেশে বাংলাদেশের মানুষের কাজের ধরনও পাল্টাতে হবে। এখন থেকে উদ্যোগ নিলে আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে বিদেশে আমাদের দক্ষ কর্মী বাড়বে।

সম্প্রতি, মালয়েশিয়ার সরকারের তথ্য মতে, মালয়েশিয়ায় বিদেশি দক্ষ শ্রমিক আছেন ১৬৬,৮১৭ জন। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশের আছেন ৬২,১১০ জন। অর্থাৎ মোট বিদেশি দক্ষ শ্রমিকের ৩৭% বাংলাদেশি। বাকিরা চীনা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও ফিলিপাইনের। সবার উপরের নামটা বাংলাদেশের। ব্যাপারটা শুনতে ভালো লাগতো, যদি ঘটনা বাস্তব হতো। কারণ এই হিসাব কাগজে-কলমে। কারণ বাংলাদেশি ৬২,১১০ জন দক্ষ শ্রমিকের মধ্যে ৯০ভাগই গত তিন-চার বছরে দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক ভিসায় আসা সাধারণ শ্রমিক। যারা কাজ করছে বারশ রিংগিত থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার রিংগিত  বেতনে। অথচ, মালয়েশিয়ার সরকারি হিসেবে দক্ষ শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন এর ডাবলের চেয়ে বেশি।

মাঝেমধ্যে মালয়েশিয়ান পত্রিকা গুলো এ সব বিষয়ে নিউজ করে দেখায় অমুক দেশ মালয়েশিয়ায় এতজন দক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে বছরে এত হাজার-কোটি রিংগিত  আয় করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ, আমাদের কাজে নয়, শুধু ভিসায় দক্ষরা এত রিংগিত আয় করছে না।গর্বের বিষয় হতো যদি মালয়েশিয়ায় সত্যিই বাংলাদেশের ৬২,১১০ জন দক্ষ শ্রমিক থাকতো বা মালয়েশিয়ার মোট বিদেশি দক্ষ শ্রমিকের ৩৭% বাংলাদেশি হতো। অন্যান্য দেশ গুলো থেকে মালয়েশিয়ায় দক্ষ শ্রমিকের ভিসায় আসা শ্রমিকরা সত্যিই দক্ষ। তাই তারা সঠিক জায়গায় কাজও করে, ভালো বেতনও পায়। আগামী দিনের বৈদেশিক শ্রম বাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদাই বাড়বে। এই দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা পূরণের সুযোগ নিতে হলে এখন আমাদের মনোযোগী হতে হবে দেশের তরুণদের ভোকেশনাল ট্রেনিং দেওয়া। টেকনিক্যাল কাজে আগ্রহী করে তোলা তরুণদের।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যুব মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ `প্রবাসী আয়` আরো উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি ঘটাতে হলে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের দক্ষ বা আধা-দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলুন। তাহলেই তারা বিদেশ গিয়ে ভালো বেতনে চাকরি পাবে। দেশে বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে পারবে। বিদেশে শুধুই অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণ আর নয়, দেশ এবার মনোযোগী হোক সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি অধিক হারে দক্ষ বা আধা-দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে।

লেখক : মালয়েশিয়াপ্রবাসী।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।