জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ও জনপ্রত্যাশা


প্রকাশিত: ০২:১৭ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

জনপ্রশাসনে পদোন্নতি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার প্রশাসনে তিন স্তরে ৫৩৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে তাদের পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবে পদায়ন করা হয়েছে ১৪৫ জনকে, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদায়ন হয়েছেন ১৮৬ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব করা হয়েছে ২০৫ জনকে। স্থায়ী পদ না থাকলেও পদোন্নতি দেয়ায় পিড়ামিড প্রশাসন থেকে এখন মাথাভারী প্রশাসনে রূপ নিচ্ছে। অর্থাৎ পদোন্নতি পেয়ে যিনি অতিরিক্ত সচিব হলেন সংখ্যানুপাতে স্থায়ী পদ না থাকায় তাকে যুগ্ম সচিব হিসেবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন দেয়া হবে উপরের পদের জন্য আর তিনি কাজ করবেন নিচের পদে- এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। আর উপযুক্তদের পদায়ন করা হবে- এটাও তাদের অধিকার। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

শুধু পদোন্নতিই শেষ কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত তাদের দায়িত্ব পালনকালে জনগণের কল্যাণকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া। তাদের রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদানের সময় কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। এর ফলে সরকারি প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জনকল্যাণমূলক নানা ধরনের প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা দেশের সেবক। জনগণের অর্থ থেকেই তাদের বেতন-ভাতা ও যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। তাই সরকারি কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব পালনকালে সর্বদা নিরপেক্ষ হতে হবে। দেশে এমন একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারেন। তাদের অবশ্যই ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণা বিসর্জন দিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে জনকল্যাণে কাজ করতে হবে- এ লক্ষ্য থেকে তাদের এতটুকু বিচ্যুত হলে চলবে না।

জনগণের দ্বারপ্রান্তে সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, দ্রব্যমূল্য, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন অনেকাংশে নির্ভর করে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের ওপর। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ দায়িত্বের মধ্যে থেকে কাজ করলে কোনো সমস্যা হয় না। সীমা অতিক্রম করলেই দেখা দেয় সমস্যা। এছাড়া প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণেও অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। এমনকি অনেক সময় উন্নয়ন বরাদ্দ ফেরত আসার ঘটনাও ঘটে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সবার আগে দেশের স্বার্থকে স্থান দিলে যে কেনো সংকট উত্তরণ সহজ হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনপ্রত্যাশার এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

এইচআর/এনএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।