মিয়ানমার কি পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ?
শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন এমন কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন, তার পরও সেই দেশের মানুষকে কচুকাটা করা হচ্ছে। শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে। এটা মেনে নেয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যা করছে তা সভ্যতা-ভব্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, তারা এখন দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা, জুলুম-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বমানবতাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার মেনে নিতেও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মিয়ানমার তো পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। তাদের যা খুশি তা করার অধিকার নেই।
দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করেছে। শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির দল ক্ষমতায় আসায় এ আশা দৃঢ় হয়েছে যে, সেখানে জাতিগত বিদ্বেষ বন্ধ হবে। কিন্তু অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চরম বর্বরতা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা-সমর্থক একটি ওয়েবসাইটে পাওয়া নয় রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা ও ৯০ জনের নিখোঁজ থাকা-সংক্রান্ত লোমহর্ষক ভিডিওটি বিবিসির পক্ষে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মিয়ানমারে আরাকান বা রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের খবর গুরুত্বসহকারে প্রচার হচ্ছে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রোহিঙ্গা কমিশন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে- এমন আশা আজ দুরাশায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রবেশাধিকার দেয়ার অনুরোধ করছে। কিন্তু মিয়ানমারকে নির্যাতন বন্ধে কোনো চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে ১৯৭০ সাল থেকে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে। এখন প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের নিয়ে নানা সমস্যায় আছে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ। বিষয়টি মানবিক হলেও এরপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দেওয়া বাংলাদেশের জন্য দুরূহ ব্যাপার।
সমস্যার সমাধান আসলে মিয়ানমারের হাতেই। আধুনিক সভ্যতায় কোনো জাতিগোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। তাদের দায়-দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। সমস্যা অস্বীকার করে সমাধান আশা করা বাতুলতা। আমরা আশা করবো, ক্ষমতার পাদপ্রদীপের নিচে থাকা অং সান সুচি এ ব্যাপারে মানবিক হয়ে তার শান্তিতে নোবেল লাভের সুখ্যাতির প্রতি সুবিচার করবেন।
এইচআর/এনএইচ/পিআর