চালবাজি বন্ধ করুন


প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ২০ নভেম্বর ২০১৬

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৫০ বস্তা চালসহ একজনকে আটকের ঘটনায় প্রমাণ হলো এখনো চালবাজি বন্ধ হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক যে, সরকারের একটি জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ কিছুসংখ্যক লোভী ও স্বার্থান্বেষীর কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে যারা দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৫০ বস্তা চালসহ মো. শাহীন (৪৫) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তারপুর সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এসব সরকারি চালসহ ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে চাল রয়েছে। উদ্ধারকৃত চালের বস্তা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির। মুন্সিগঞ্জের রিকাবিবাজার এলাকায় বিনোদপুর শরিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে এসব চাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার বাস্তব উদাহরণ যেন সরকারের ‘হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ আওতায় ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কার্যক্রমের অনিয়ম। অনিয়ম বন্ধে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কর্মসূচির চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসে গণমাধ্যমে। প্রকৃতপক্ষে  যারা এই চাল পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী অনেকেই এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ লোককে মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী চাল বিতরণ শুরু হয়। এরপর আশা করা গিয়েছিল প্রকৃত দরিদ্ররা চাল পাবে। এবং চালের দামও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। অভিযোগ আছে, ডিলারেরা চাল মজুদ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে  বেশ কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে অনেকের। ওজনে কারচুপিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। বগুড়ার শাজাহানপুরে কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগে তিনজনকে সাজা দেয়া হয়েছে। তবে এরপরও অনিয়ম থেমে থাকেনি। গতকালের চাল আটকের ঘটনায় সেটি প্রমাণিত হলো।

গরিবের চাল নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি মেনে নেয়া যায় না। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার বিকল্প নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। মনে রাখা প্রয়োজন, এর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এইচআর/এনএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।