বব আর মেরিনার গল্প এবং আমরা


প্রকাশিত: ০৫:৪২ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

বয়স নব্বইয়ের বেশি, রোগাটে। মুখটা শুকিয়ে দীর্ণ, কাপড় চোপড়ের অবস্থা আরও করুণ। রুগীটি আমার অনেক দিনের চেনা। আমাকে প্রথম দিনই বলে দিয়েছিল `মিস্টার মিলার ` বলে ডাকবে না আমাকে। `বব ` নামে ডাকবে।

এদেশে সবাই প্রথম নামে ডাকাটা পছন্দ করে। বব এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। সে এবার কোন সময়সূচি মেনে আমার অফিসে আসেনি। অফিসের সবাই ওকে চেনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অসম সাহসী যোদ্ধা সে। ওর গুণগাথা কিংবদন্তির মতো। ওর একটিই সন্তান। সিয়াটলে থাকে সে। বছরে একবার তাঁর বাবাকে দেখতে আসে সে। ববের স্ত্রী অনেক আগেই তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্য জগতে। নিকটের বন্ধুরাও কেউ বেঁচে নেই।

ববের ওজন কমছে। খুব দুর্বল সে এখন। ওকে জিজ্ঞেস করতে করতে বুঝলাম এখন ওর বাজারে যাবার ক্ষমতা নেই। রান্না করার ক্ষমতা নেই। বেচারা স্রেফ না খেতে খেতে শুকিয়ে যাচ্ছে। বয়স্ক এ মানুষের সামাজিক সমস্যা আমাকে খুব বিপদের মাঝে ফেলে দিলো। এ রোগের প্রতিকার কিভাবে করা যায় এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমার আরেক রোগীর কথা মনে পড়লো। তাঁর নাম মেরিনা।

Atikuzzaman

মেরিনা লিথুয়ানিয়া বলে একটি দেশ থেকে অধিবাসী হিসেবে এখানে এসেছিল। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সে এখন আমাদের শহরের `বয়স্ক মানুষের সেবা বিষয়ক বিভাগের"(Council od Aging) প্রধান। তাঁকে ফোন দিতেই সে এসে হাজির। আমি অভিভূত। ববের মতো মানুষের জন্য এ শহরের সমাজ কল্যাণ বিভাগ তাঁদের বাড়িতে দিনে দুবেলা গরম খাবার বিনা খরচে পৌঁছে দিয়ে আসে। এই বিভাগের নাম " Meals on Wheels"। তারা সপ্তায় একদিন তাঁকে তাঁর পছন্দ মতো দোকানেও নিয়ে যাবে। সবই বিনে খরচাতে।

ববের মুখে প্রশান্তির হাসি। ওর হাসি মাখা মুখটা দেখে আমার দিনটি আলোতে ভরে গেল। মেরিনাকে বললাম, " তোমরা এত ভাল কাজ করছো। আমার বন্ধুদের তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।" ও হেসে রাজি হয়ে গেল ছবি তুলতে। ববের কথা ভাবতে ভাবতে আমার বাংলাদেশের কথা মনে পড়লো। আমার বাবার বয়স বেড়েছে। তাঁর চারদিকে সাহায্যের হাতের অভাব নেই। অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছে ববের মতো। তাঁদের নিয়ে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কতটুকু? আসুন চারদিকে তাকিয়ে দেখি। ববের মতো অনেকেই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।

লেখক : পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান, ফ্লোরিডা হাসপাতাল, ফ্যাকাল্টি, কলেজ অব মেডিসিন, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।