কেন এই অপতৎপরতা?


প্রকাশিত: ০৪:০৮ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যে আহ্বান জানিয়েছেন সাম্প্রতিক সহিংস হামলার (নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জে) পরিপ্রেক্ষিতে তা আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর নারিন্দা রোডের শ্রী শ্রী মাধব গৌড়ীয় মঠের ‘ভক্তি বিলাস তীর্থ ভবনের’ চতুর্থ ও পঞ্চম তলার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘ধর্মীয় সহিংসতা রোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সচেতন হতে হবে।’ 

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাঁওতাল অধিবাসীদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত গরিব সম্প্রদায়ের। আমি আশা রাখবো যারা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে আছেন, তারা একটু সচেতন হোন, তাহলে এই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাতে কোনো আঘাত না আসে আপনারা দুই মেয়রও সে দিকে খেয়াল রাখবেন।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন আছে। এখানে কিছু লোক বেশ কিছুদিন ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন আমি তাদেরও বলছি, যারা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী তাদের ধর্ম পালনে যেনো বাধা না দেই। তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় বানিয়ে দেই। কেউ কারো প্রতি আঘাত না করি, কারো মন্দির-মসজিদে বাধা না দেই। তাদের সহাবস্থানে বাধা সৃষ্টি করবো না। যারা এসব করছে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এগুলো করছে।

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। নাসিরনগরে এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একটি স্বাধীন দেশে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নাগরিকদের হয়রানি, হত্যা, নির্যাতনের শিকার হতে হবে- এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হবে- এটা হতে পারে না। সরকারকেও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনো নাগরিক তার ধর্মীয় পরিচয় যাই থাক না কেন, তার প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। নাসিরনগরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে ধরনের বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি কিছুতেই কাম্য নয়। গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালরাও অন্যায়ের শিকার। সেখানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশের ঐতিহ্য যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের ভয়, শঙ্কা দূর করতে হবে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।