প্রবাসী আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নিন


প্রকাশিত: ০৬:০৯ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৬

জনশক্তি রফতানি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। কিন্তু বর্তমানে প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়েছে। এটা অবশ্যই উদ্বেগজনক বিষয়। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে জনশক্তি রফতানি করে প্রবাসী আয় বাড়ানো। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য কারণে যদি সেখানে ভাটা পড়ে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সহযোগী একটি দৈনিকের হিসাব মতে নতুন অর্থবছরের প্রথম চার মাস ধরেই প্রবাসী আয়ে চলছে মন্দাভাব। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে। অথচ গত বছর এসেছিল এর চেয়ে ৩৮ কোটি ডলার বেশি। জুলাইয়ের পরের তিন মাসেও প্রবাসী আয় কমছেই। এ অবস্থায় সব মিলিয়ে গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৪২৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। আর এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫০৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ।

প্রবাসী আয় কমার নানাবিধ কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকে রিজার্ভ কেলেঙ্কারির ঘটনার প্রভাবে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রার দরপতন হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিরতার কারণেও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো কমেছে। দক্ষ জনশক্তি না পাঠানোর কারণেও কাঙ্খিত রেমিটেন্স আসছে না। এছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দুর্নীতি, প্রতারণায় অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণেও প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নানা অদক্ষতা ও অনিয়ম তো রয়েছেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বর্তমানে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর সিংহভাগ কৃতিত্ব প্রবাসী শ্রমিকদের। এই রিজার্ভের ওপর ভিত্তি করেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্পে হাত দিয়েছে সরকার। কিন্ত দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে হ্যাকারদের হানা দেওয়া সংশ্লিষ্টদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ জন্য অনেকেই ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাতে আস্থা পাচ্ছে না। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি রফতানি করেও বৈদেশিক আয় দ্বিগুণ করা যায়। এ ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। জনশক্তি রফতানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে যে পরিমাণ কাজ করা উচিত সেটি যে হচ্ছে না তার প্রমাণ হচ্ছে রফতানি আয় কমে যাওয়া। অন্য কোনো দেশ হলে এই খাতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিত। কারণ জনশক্তি রফতানির খাতটিকে তুলনা করা যায় সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের সঙ্গে। অথচ আমরা অবহেলায় জনশক্তি রফতানির বাজার হারাতে বসেছি।

জনশক্তি রফতানির প্রবাহ ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকেও নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মীরা রয়েছে। সেখানে চলছে অস্থিরতা। এই অবস্থায় জনশক্তি রফতানি খাতে ধস নামার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এছাড়া তৈরি করতে হবে দক্ষ জনশক্তি। বিশ্বব্যাপী যাতে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা সৃষ্টি করা যায় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। জনশক্তি রফতানিতে গতি এনে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।