যে পশুর ভয়ে বন্দি হয়ে থাকছে আমার ছোট্ট পাখি


প্রকাশিত: ০৭:১৪ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৬

আমার মেয়ের বয়স ১০। হঠাৎই মনে হচ্ছে মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। কলেজে পড়া মেয়েকে নিয়ে যে আতঙ্ক বাবা মার একই আতঙ্ক আমি বোধ করছি। মনে হচ্ছে মেয়ের চারপাশে কুকুর, নেকড়ে, হায়েনা সব ঘুরে বেড়াচ্ছে।  আমার মনে থাকছে না আমার মেয়েটো এখনও শিশু। একই ভবনের নিচের তলায় তার চাচা থাকে। আমি মেয়েকে তার কাছে  যেতে দেই না। পাশের বাসার দুটো ছেলে, কলেজ জীবন থেকে এই বাসায়। মেয়েটাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে তারা, আমি তাদের কাছেও মেয়েকে যেতে দেই না।  বাড়ির কেয়ার টেকার, ড্রাইভার, দোকানদার সবাইকে আমার ভীষণ শত্রু মনে হচ্ছে আজকাল।

১০ বছরের মেয়ের ছেলে টিচার বদলে আমি মেয়ে টিচার রেখেছি এক মাস ধরে। এমনকি মেয়ের বাবা যখন মেয়েকে আদর করছে আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছি তার দিকে।  আমি নিজেই কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? আমার মেয়েটার তো এই বয়সে সবার আদরই পাওয়ার কথা। সবার সাথে খেলবে, বেড়াতে যাবে।  আনন্দে কাটবে তার সময়।এই বয়সের মেয়েকে আমি কেমন করে সাবধান করবো? কেমন করে তাকে বলা সম্ভব ‘চাচুর আদর নিয়ো না’! তারপর সে যে প্রশ্ন করবে ‘কেনো’?

সেই প্রশ্নের উত্তর কি দেবো আমি? কেউ কি সেই উত্তর এত সহজে দিতে পারবে? ১০ বছরের মেয়েকে  আমি কেমন করে বুঝাবো ধর্ষণ কী জিনিস? সে কি বুঝবে তা? দারুণ এক শৈশবে যারা এই অসীম ভয়ের আকাশ দিয়ে ঢেকে ফেলছে আমি অভিশাপ দেই তাদের। পুণ্যবান হিসাবে আমার সেই অভিশাপ লাগবে, বাজ পড়ে বা রোড এক্সিডেন্টে বীভৎস  মৃত্যু হবে এই পশুদের- এমন  কি ভাবা যায়? যেহেতু আমি পুণ্যবান না, আমি তাই বিচার চাই। একটা বিচার কি হয়েছে এখনো যে বিচারের ভয়ে  পুরুষ মানুষ হওয়া শিখেছে? কারো মনে পড়ে এমন একটা বিচার? যা উদাহরণ হয়ে আছে? কয়দিন লাগে এই বিচারে। যে পশুগুলো এই কাজ করে তাদের তো চেনা যায় সাথে সাথে। তাদের বিচারটা করতে কয়দিন লাগে? এত দিন কেনো লাগে?

বিচার না হওয়ার শাস্তি ভোগ করছি আমরা। নারী ধর্ষণকারীরা নেমেছে কলেজ পড়ুয়াদের উপর শকুন হয়ে। সেইখান থেকে নেমেছে স্কুলে। এখন ৪ বছরে শিশুকেও ছাড় দিচ্ছে না তারা। আরো ভয়াবহ তথ্য মিলেছে, আড়াই বছরের শিশুকেও আদরের নামে পাশবিক সুখ নিচ্ছে এক পশু। কই আছি আমরা?

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি হিসাবে ধর্ষককে নপুংশক করে দেয়ার আইন পাশ হয়েছে। সৌদি আরবে ধর্ষণের শাস্তি শিরোশ্ছেদ। চীনেও ধর্ষককে নিতে হয় মৃত্যুর স্বাদ। ধর্ষকের ঘাড় ও স্পাইনাল কর্ডের সংযোগ স্থানে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উত্তর কোরিয়ায় অপরাধীকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মাথা বা অত্যাবশ্যক অঙ্গে গুলি করা হয়। ইরান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশরেও  ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর আফগানিস্তানে এই শাস্তি দেয়া হয় ৪ দিনের মধ্যে। ধর্ষককে ফাঁসি দেওয়া হয় অথবা মাথায় গুলি করে মারা হয় সেখানে।

আর আমাদের দেশে? এই শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল। কিন্তু কয়জন সেই শাস্তি পর্যন্ত যায় কেউ কি জানে? ঘটনার ২/৩ দিন হইচই, মিডিয়া কাভারেজ। তারপর? বছরের পর বছর চলে এই বিচার কাজ। মেয়েটি আর তার পরিবার সাহসী হয়ে মামলা তো করে। কিন্তু সেই ব্যয়ভার বহন আর  সামাজিক সম্মান বাঁচাতেই শেষ হয় তাদের বিচার পাওয়ার ইচ্ছা। বিচার শেষ করতে পারে এমন কয়জন টিকে থাকে শেষ পর্যন্ত?

শাস্তি যদি না দেন কেনো করবে না তারা কিছু?কেনো করবে না এই দেশকে তার বিকৃতির নিরাপদ ভূমি? দেশে তারা নিয়ে এসেছে ধর্ষণের ঋতু। যে ভয়ের আকাশ তারা মেলে রেখেছে সবার উপর। যে পশুর ভয়ে বন্দি হয়ে থাকছে আমার ছোট্ট পাখি। তার শাস্তি, তাদের শাস্তি, সম্মুখ শাস্তি চাই, দ্রুত শাস্তি চাই, আজই চাই, এখনই।
লেখক : সাংবাদিক, টিভি-উপস্থাপক।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।