“পুরুষ নির্যাতন” পুরুষদের ইগোজনিত ব্যাপার না তো?


প্রকাশিত: ০২:৪৮ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

বেশ কিছুদিন আগে এক ছেলে মেয়ের অন্তরঙ্গ ভিডিও ফ্ল্যাশ করা হলে মেয়েটাকে খ ম গালি দেওয়া হচ্ছিল।  আমি পুরো ঘটনার বিপক্ষেই ছিলাম। একে তো এ সাইবার অপরাধ। অপরদিকে সেই অপরাধ কে সায় দিয়ে মেয়েটাকে গালাগাল।

আমার কথা ছিল সোজাসাপ্টা, “তুমি ভিডিও দেখবে। আবার গালিও দিবে মেয়েকে! এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কেন হবে?” উত্তরে আমার এক (পুরুষ) বন্ধু বলছিল, “শুধু মেয়েকে নিয়ে ভাবছ কেন? ছেলেটার যে সম্মান যাচ্ছে, তার উপর কেউ মায়া দেখাচ্ছ না কেন?” আমি তখন তাকে রিকুয়েস্ট করলাম, “প্লিজ তুমি ছেলেটাকে খ ম এর কোন মেল ভার্সনের গালি দাও, আমার মায়া জন্মাবে তাহলে”।

নেই! ডিকশনারি খুঁজেন কোন গালি পাবেন না পুরুষের জন্য। পান থেকে চুন খসলে মেয়েকে দস্তুরমত গালি দেওয়ার জন্য একগাদা গালি পাবেন। সেখানে আপনাকে খুঁজে পেতে ছেলেকে “অমুকের বাচ্চা” “তমুকের বাচ্চা” বলে গালি দিতে হবে। আচ্ছা “অমুকের বাচ্চা” মানে কি মা কেই গালি দেওয়া হয় না? মায়েরই তো বাচ্চা!  এই বছর জুন মাসের দিকে নারায়ণগঞ্জের পুরুষ নির্যাতন দমন আইনে গণস্বাক্ষর হয়েছিল। গত কয়েক মাসে পরপর তনু, রিশা এবং সম্প্রতি খাদিজার ঘটনার পর “নারীর উপর সহিংসতা” বাড়ছে এমন টপিকের বিপক্ষে “পুরুষ নির্যাতন” বিষয়ক অনেক আলোচনা করা হচ্ছে। আলোচনা করছেন পুরুষরাই।

আমার ভালো লাগছে। পুরুষরা নিজেদের নির্যাতনের বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।এই সচেতনতা তাদের বুঝাবে নারীদের উপর পুরুষতন্ত্র কি স্টিম রোলার চালিয়ে আসছে। এই পুরুষতন্ত্রে পুরুষের পাশে নারীরাও কিন্তু আছেন। আমি পুরুষদের নির্যাতন উড়িয়ে দিচ্ছি না। অনেক পরিবারেই আমি দেখেছি মায়েদের একটা আলাদা আধিপত্য থাকে। সেখানে বাবা নামক পুরুষের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয় না। এদেরকে বাইরে লোকেরা “মিনমিনে পুরুষ” বলে। আমি এরকম কয়েকজন মিনমিনে পুরুষকে চিনি, এরা খুব দুঃখে থাকে। আমার তাদের সবার কাছে এক প্রশ্ন ছিল “যদি অন্যায়ই মনে হচ্ছে আপনার কাছে এই সবকিছু, তো ভয়েস রেইজ করছেন না কেন?” তারা এ ব্যাপারে আর কথা বাড়াননি।

মিনমিনে পুরুষের অনেকের দাবি, তাদের বাসার কাজ করতে হয় যেটা “মেয়েদের” করা উচিত। তাদের বউ রাতে বাসায় আসে, তারা কিছু বলতে পারে না। অনেকসময় তাদের বউ এর টাকায় চলতে হয়, তাই তাদের ডমিন্যান্ট হতে হয়। পুরুষ নির্যাতন কি তাহলে মেইল শভিনেস্টদের দিবাস্বপ্ন? রাতে বাসার বাইরে থাকা, টাকার জোরে বউকে ডমিন্যান্ট করা! এই একই কাজগুলো যখন একজন পুরুষ করে তাকে “পুরুষ সিংহ” বলা হয়। অথচ নারী করলে সেটা “পুরুষ নির্যাতন” হয়ে যায়।  

মিথ্যা মামলা, জেল জরিমানা করা হয় পুরুষদের বিরুদ্ধে। নারীরাই সেটা করে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে দেখা গেছে আরেক পুরুষের প্ররোচনে নারী এই মিথ্যা মামলাগুলো করছে পুরুষকে ফাঁসাতে। কারণ নারী রিলেটেড ইস্যু গুলো সেনসেটিভ হয়। আর এই সেনসেটিভ ইস্যুগুলোকে এক পুরুষের বিরুদ্ধে আরেক পুরুষই  হাতিয়ার বানায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব মিথ্যা মামলায় নারী “মিডিয়া” থাকে কেবল।

খুব খেয়াল করে দেখবেন, পুরুষ নির্যাতনে নারী কখনই একক শাসকের ভূমিকায় থাকে না। নারীর সঙ্গে হাত মেলায় ওই পুরুষের শত্রুগুলো। কিন্তু একটা নারীকে নির্যাতন করতে গেলে পুরুষের কাউকে দরকার পড়ে না। সে একাই কুপাইতে পারে। পুরুষ নির্যাতন ভিত্তিহীন না। আইন করা আবশ্যক আমিও মানি। কিন্তু নারী নির্যাতন, নারী সহিংসতা যখন দিনে দিনে বেড়ে চলছে তখন এই “পুরুষ নির্যাতন” ইস্যু আনাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে “লঘু” করে দেওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু না!  
কিছু প্রশ করি। দেখুন তো উত্তর আসছে কি না?

এসিড ছুঁড়ে মেরে স্কুলের যাওয়া বন্ধ কবে কখন কোন ছেলের সঙ্গে হয়েছে? স্কুল বা কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কোন ছেলেকে মুখ চেপে ধর্ষণ করা হয়েছে? প্রেমে রাজি হয় নি বলে কোন ছেলের পেটে মাথায় কোপানো হয়েছে? কোন ছেলের স্পর্শকাতর অংশে প্রায় রোজই নোংরা স্পর্শ করা হয় পাবলিক বাসে? বিয়ের পরে কোন ছেলের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া হয়? কোন ছেলেকে শ্বশুরবাড়িতে মারপিট করা হয় যৌতুকের জন্য?

এই প্রশ্নের উত্তর যেদিন আসবে। সেদিনই নারী নির্যাতনের মধ্যে পুরুষ নির্যাতন আনাটা যৌক্তিক হবে! তার আগে নয়।  শেষ করি একটা ঘটনা দিয়ে। খাদিজার ওপর  আঘাতের বিষয়টাকে এক ছেলে এভাবে দেখাতে চেয়েছে, “মেয়েটা প্রেম করেছে। ছেলেকে আশা দেখিয়েছে। পরে ফ্যামিলি চায়নি ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে হোক। মেয়েটা চলে গেছে। তাই ছেলেটা রাগে দুঃখে মেয়েকে কুপিয়ে মেরেছে। এখানে খাদিজা আর খাদিজার ফ্যামিলির দোষ আছে”।

আমি দেখেছি বহু ছেলে ব্রেকআপের পর রাগে দুঃখে প্রেমিকার প্রাইভেট মেসেজ বা ছবি পাবলিক করে দেয় । কারণ তাদের কাছে প্রেমের পর মেয়েটার চলে যাওয়াকে  “পুরুষ নির্যাতন” বলে মনে হয়। অথচ একটা মানুষের সম্পূর্ণ অধিকার থাকে কাউকে না ভালোবাসার। আচ্ছা বদরুল নামক ছেলেটি চলে গেলে কি খাদিজা তাকে কোপাতো?  পুরুষের নির্যাতনের অনেক উদাহরণ দেখার পর মনে হয়,  পুরুষ নির্যাতন কি আসলে অনেকটা পুরুষের ইগোজনিত সমস্যা? ইগোতে লাগলেই কি সেটা হয়ে যায় “পুরুষ নির্যাতন”? এই জবাবটা ভালো তারাই বলতে পারবে!

লেখক : ফাউন্ডার, ফেমিনিজমবাংলা

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।