মির্জা ফখরুলের বোধোদয়


প্রকাশিত: ০৩:৫৫ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৬

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভেতর ও বাইরে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। ছাত্র জীবনে কমিউনিস্ট ভাবধারায় আকৃষ্ট  হয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করেছেন অনেকদিন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠা মির্জা ফখরুল বিএনপিতে মানানসই নন। দলের স্বেচ্ছানির্বাসিত নেতা তারেক রহমানের সাথে খটমট লেগে থাকারই কথা। এবং তাই হচ্ছে।

সেই মির্জা ফখরুল ১০ অক্টোবর কিছু বোধোদয় বা উপলব্ধি বা কিছু সত্যি ভাষণ দিয়েছেন। যা বিএনপির প্রধানের বোঝার ক্ষমতা থাকলেও কখনো প্রকাশ করতে পারেন না। দলের অন্য নেতাদের সেরকম সৎসাহস আছে বলে প্রমাণ পাওয়াও যায় না। তিনি বলেছেন, ১৯৯০ আর ২০১৬ সাল এক নয়। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। বিএনপি নেতৃত্ব গলা ফাটিয়ে যত বক্তৃতাই দিক না কেন মির্জা ফখরুলের এই উপলব্ধিই সঠিক। গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারার আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোন আন্দোলনেই বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। মাঝখান থেকে অনেকগুলো মানুষকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো। এজন্য হয়তো মির্জা ফখরুল কখনো তাদের কাছে ক্ষমা চাইবেন আশা করি। ক্ষতিপূরণতো আর করতে পারবেন না, অন্তত ভবিষ্যতে এমন হঠকারি আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাধা দিবেন বলেই বিশ্বাস করতে চাই।  

মির্জা ফখরুল ১০ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত নাজির হোসেন জেহাদের স্মরণে ‘জেহাদ স্মৃতি পরিষদ’  আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তৃতা করছিলেন। ১৯৯০ সালে জেহাদের মৃত্যুকে ঘিরেই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গড়ে ওঠেছিল। যেই ঐক্য স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করেছিল। ওইদিনটির কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল আরো বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অকল্পনীয়।  ১৯৯০ সালের বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি এবং প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ’৯০ সালে জেহাদের মৃত্যু পুরো দেশে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যাপারে আবেগ সৃষ্টি করা যায়নি। মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ করার বোধ জাগ্রত করে দিতে হবে। মানুষই একমাত্র ভরসা। অন্য কেউ বিএনপিকে কিছু করে দেবে না।

মির্জা ফখরুলের এই বোধোদয় নিশ্চয়ই খালেদা জিয়ার বোধোদয়ের মত নয়। ৯০ সালে সবাই এক হয়েছিল, কারণ মানুষের সামনে গণতন্ত্রের স্বপ্ন ছিল। ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরপরই  মানুষের সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু হয়। এখন সেই স্বপ্নের অবশিষ্টটুকুও নেই। তাই এখন এক হাজার মানুষের মৃত্যুও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না। আর তিনি যে আবেগ সৃষ্টির কথা বলেছেন সেই আবেগ নষ্ট করে দিয়েছেন তারাই। দিনের পর দিন পেট্রোল বোমা মেরে মানুষের মৃত্যুর খবর পড়লে বা দেখলে নিশ্চয়ই কোন না কোন সময় মানুষের স্পর্শকাতরতা কমে যেতে বাধ্য। আর যে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন, মানুষ কেন প্রতিবাদ করবে? মানুষ বিনিময়ে কী পাবে? একদলকে হটিয়ে আরেকদল বসবে। মানুষের ভাগ্যের চাকা কি ঘুরবে? সেই নিশ্চয়তা কোথায়? মির্জা ফখরুল বলছেন মানুষই একমাত্র ভরসা। কথাটি ঠিক কিন্তু সেই মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে কে? তারেক রহমান? এই জায়গাটিও ঠিক করতে হবে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতির কারণে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হয়নি। ভূরাজনীতি নিজেদের পক্ষে আনা গেলে হয়তো সে বিজয় অর্জিত হতো। তার এ কথার মধ্য দিয়ে কী প্রমাণিত হলো? যিনি বললেন মানুষই একমাত্র ভরসা আবার সেই তিনিই বললেন জাতীয় ঐক্য হওয়ার পরও বিজয় অর্জিত না হওয়ার কারণ ভূরাজনীতি নিজেদের পক্ষে না থাকা। অর্থাৎ শুধু মানুষই নয়, ভূরাজনীতিও পক্ষে থাকতে হয়। ভূরাজনীতি কেন পক্ষে ছিল না সেই বিশ্লেষণ কি বিএনপি করেছে? যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি আর জামায়াত শিবিরকে সাথে রাখলে যে ভূরাজনীতি পক্ষে থাকবে না- এটা বোঝার ক্ষমতাও নিশ্চয়ই বিএনপির ছিল। কিন্তু কেন, কার কারণে এখনো জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা যাচ্ছে না সেই প্রশ্নের জবাবও মির্জা ফখরুল একদিন দিয়ে দিবেন আশা করি।  

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ পছন্দ করে না। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যে পৃথিবী গণতন্ত্রের কথা বলে তারা শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ তাঁকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। হ্যা ঠিকই বলেছেন মির্জা সাহেব এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। শেখ হাসিনাকে ৯০ ভাগ মানুষ অপছন্দ করে কিনা নিশ্চিত নই তবে অনেক মানুষই তাকে পছন্দ করে না। মির্জা ফখরুল যদি মনে করেন দেশের ৯০ ভাগ মানুষই পছন্দ করে না কিন্ত তারই কথায় যে পৃথিবী গণতন্ত্রের কথা বলে তারা সবাই শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে। কেন খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিশ্ব পছন্দ করে সেটি বুঝতে হবে বিএনপি নেতৃত্বকেই। কর্মিদের সেটা বোঝার দরকার নেই। খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানকে বোঝান সেটা। ৯০ আর ২০১৬ যে এক নয় সেটাও তাদের বোঝান। কেন বিশ্ব আজ শেখ হাসিনার পক্ষে সেটা যত দ্রুত খালেদা জিয়া বা তারেক বুঝবেন বিএনপির জন্য ততই মঙ্গল।

লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।