রবির বিজ্ঞাপনে কৌশলে জাতীয় পতাকার অবমাননা?


প্রকাশিত: ০৭:৩৪ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৬

যেকোনো পণ্যের প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে বিজ্ঞাপন। হোক তা টিভি পর্দায় কিংবা লোকাল বাসে ক্যানভাসারের মাধ্যমে। একটি পণ্য বা সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার প্রচার-প্রচারণার বিকল্প নেই। আর এই দায়িত্বটি নিজের কাঁধে তুলে নিতে গড়ে উঠছে হাজারটা বিজ্ঞাপনী সংস্থা। কখনো ইতিহাস-ঐতিহ্য, কখনো চলমান ইস্যু, কখনো মানুষের আবেগকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে নানা বিজ্ঞাপন। আর এই আবেগ বেচাকেনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের হৃদয়স্পর্শী বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো আমাদের কাঁদায়, মজার বিষয় নিয়ে নির্মাণ করা বিজ্ঞাপনগুলো আমাদের হাসায়।

আমাদের আবেগকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করে নিচ্ছেন, আমাদেরই সচেতনতার অভাবের কারণে তারাই এমনসব বিষয় প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, যা আমাদের জাতিসত্ত্বাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটপাগল জাতি। ক্রিকেটে যেদিন বাংলাদেশ পরাজিত হয়, সেদিন অনেকেরই আনন্দ উবে যায়। যেদিন জয় আসে, সেদিন পুরো বাংলাদেশ যেন একসঙ্গে হেসে ওঠে। ক্রিকেটকে ঘিরে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসার শেষ নেই। সেই সুযোগটাই ষোলআনা কাজে লাগাচ্ছে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটকে ঘিরে আবারো উন্মাতাল বাংলাদেশ। দীর্ঘবিরতির পরে দেশের মাটিতে খেলতে এসেছে ভিনদেশী মেহমান।

জয়-পরাজয়, আবেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে আমাদের যখন সময় কাটছে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে তখন প্রচার হচ্ছে ক্রিকেটীয় উন্মাদনা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন। এর ভেতরে বেসরকারি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির একটি বিজ্ঞাপন লঙ্ঘন করেছে সবধরনের নীতিমালা। মানুষের আবেগকে ব্যবহার করতে গিয়ে জাতীয় পতাকাকে অসম্মানের বিষয়টি তাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায়, বাসার গৃহকর্মী যে টি-শার্টটি দিয়ে জানালা পরিষ্কার করছেন, সেটিতে স্পষ্টত বাংলাদেশের পতাকা দৃশ্যমান। টি-শার্টটির বামপাশে একটি ফুটোও দেখা যায়। বিজ্ঞাপনটিতে দেখানো হয়েছে, টি-শার্টটি যুবকের জন্য লাকি টি-শার্ট, আর সেকারণেই সে এটি গায়ে পরে খেলা দেখতে চায়।

এটি আমাদের ক্রিকেটীয় উন্মাদনার অংশ। কিন্তু টি-শার্টটি লাল-সবুজের পতাকার আঙ্গিকে না হয়ে অন্য কোনো নকশার হলে এমন কোনো ক্ষতি ছিল না। গৃহকর্মী যখন জানালা পরিষ্কার করছেন, তখন স্পষ্টতই সবুজের মাঝে লাল বৃত্তটি দেখা যাচ্ছে। এবং তখনও পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না, সেটি আসলে পতাকা নয়। তাই প্রথম দর্শনেই একটি বড়সড় ধাক্কা খাচ্ছেন দেশপ্রেমী মানুষেরা। ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিনের কেক ভারতীয় পতাকার মতো তিনরঙা ছিল বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল পতাকা অবমাননার। সেলিব্রেটিদের পতাকা-রঙা শাড়ির পাড় পা ছুঁইছুঁই করেছিল বলে বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। খেলার সময় পরিধেয় হেলমেটে বিসিসিআইর ওপরে জাতীয় পতাকা অঙ্কিত ছিল বলে শচীন টেন্ডুলকার আরো একবার পতাকা অসম্মানের দায়ে অভিযুক্ত হন। এরপর তাকে হেলমেটে আগে জাতীয় পতাকা ও তারপর বিসিসিআই অঙ্কিত করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে চীনের আইন আরো কঠোর। আটকাদেশ, তিন বছরের জেল-জরিমানা ছাড়াও ব্যক্তির রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চীনের জাতীয় পতাকা ব্যবহারবিধি আইনে।

ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং ডেনমার্কে জাতীয় পতাকার অবমাননা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আরব বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় পতাকায় ইসলামিক স্বাক্ষর রয়েছে। এসব দেশে জাতীয় পতাকার মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং জাতীয় পতাকার ন্যূনতম অবমাননাকে ইসলামের অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হয়। আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে এই আইন সংশোধিত হয়। এই সংশোধনীতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

না জেনে, না বুঝে আর অতি উচ্ছ্বাসে যারা পতাকা ব্যবহারবিধি লঙ্ঘন করেন, তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে এই শাস্তির বিধান যথাযথ হতে পারে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক কোনো প্রচারণায়, বিজ্ঞাপনে জাতীয় পতাকার ব্যবহার বিধিবহির্ভূতভাবে করে থাকে, তার জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো, একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি শাস্তি হিসেবে একেবারেই অপ্রতুল। তাই আরো কঠোর আইনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা হোক।

লেখক : সাংবাদিক

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।