এমন দরদি কেউ হবে না


প্রকাশিত: ০৬:৫৪ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

একটি প্রচলিত গল্প এ রকম- মা তিন সন্তানসহ নদীতে ডুবে যাচ্ছে। সময় যাচ্ছে আর বাঁচার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। মা ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে একটি সন্তানকে তার পায়ের নিচে রাখলেন। এতে মায়ের উচ্চতা কিছুটা বাড়লো। ফলে আরো কিছুক্ষণ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হলো। এভাবে যতই সময় যাচ্ছে জোয়ারের পানি উঠছে উপরের দিকে। মায়ের বেঁচে থাকার আকুতি তখন তীব্র। এরপর একে একে বাকি দুই সন্তানকেও তিনি পায়ের নিচে দিলেন এবং শেষ পর্যন্ত এভাবে জীবনরক্ষা করলেন। এই গল্পের মর্মার্থ হচ্ছে নিজের জীবনের কাছে সবকিছু তুচ্ছ। কিন্তু এবারের গল্পটা এর বিপরীত। এটি গল্প নয়। বাস্তবেই এমনটি হয়েছে। একজন মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে বড় যে আর কিছু নেই সেটি প্রমাণিত হলো এই হৃদয়বিদারক অথচ মানবিক ঘটনায়।

ছেলে তানভীরকে নিয়ে বিয়ের যাত্রীবাহী নৌকায় করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বৈরাগীরচর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষায় গিয়েছিলেন তানজিলা। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে একই নৌকায় বাড়ি ফিরছিলেন। নাটোর ও কুষ্টিয়ার মাঝামাঝি চিলমারী-জোতাশীর এলাকায় আরেকটি নৌকার সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁদের নৌকাটি ডুবে যায়। অন্য সাত-আটজন যাত্রী বেঁচে গেলেও সন্তানসহ নিখোঁজ হন তানজিলা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইসলামপুর গ্রামের কাছে অন্য একটি নৌকার যাত্রীরা শিশুটিকে নদীতে ভেসে থাকতে দেখে। আধডোবা মায়ের শরীরের ওপর অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল শিশুটি। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিল সে জীবিত আছে। মা-ছেলে দুজনকেই অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পদ্মার তীব্র স্রোত আর ঢেউয়ের তোড়ে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিলেন তানজিলা খাতুন। যখন বুঝলেন মৃত্যু নিশ্চিত তখন  শেষ চেষ্টা হিসেবে শিশুসন্তানকে বাঁচাতে তুলে নিলেন মাথার ওপর। তাঁর চেষ্টা বৃথা যায়নি। বেঁচে গেছে শিশুটি। শনিবার রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের অদূরে পদ্মা নদী থেকে তানজিলা ও তার ছেলেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিশুটির জ্ঞান ফিরে আসে। কিন্তু তানজিলা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

যখন নানা অবক্ষয়ের খবর চারদিকে তখন তানজিলা আবার দেখিয়ে দিলেন মা কি করতে পারে তার সন্তানের জন্য। যখন সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন, মা-বাবার হাতে সন্তানখুনসহ নানা অমানবিক ঘটনা খবরের উপাদান হচ্ছে তখন তানজিলা সেখানে মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন। মায়ের চেয়ে দরদি আর কেউ নেই-এই কথাটি তানজিলা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে বাঁচিয়ে আবারো প্রমাণ করলেন। তানজিলার মৃত্যু দুঃখজনক, কিন্তু তিনি যে উদাহরণ দেখিয়ে গেলেন তা এই অবক্ষয়িত সমাজে পথ দেখাবে। এই মানবিক বোধ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য সভ্যতার এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করাই হোক সকলের লক্ষ্য।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।