বেপরোয়া যান কেড়ে নিচ্ছে শত প্রাণ


প্রকাশিত: ০৬:৩৮ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। বেপরোয়া গতির যান কেড়ে নিচ্ছে শত শত প্রাণ। মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও চালকেরা ১২০ কিলোমিটারপর্যন্ত গতিতে যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছেন। এতে অসংখ্য জীবন বলি হচ্ছে। প্রতিকারহীনভাবেই চলছে এই দুর্ঘটনা নামক ‘হত্যাযজ্ঞ’। প্রশ্ন হচ্ছে এভাবে কি চলতেই থাকবে?

বেসরকারি হিসাবে, ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে ১৭ জনের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে, এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৭ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৭ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩৪৬ জন। দুর্ঘটনায় এতোগুলো মানুষের প্রাণহানির কথা ভাবতেও কষ্ট হয়। এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের কোনো না কোনো স্থানে প্রতিদিনই কারও না কারও জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে দুর্ঘটনা নামক দানবের হাতে।

সড়ক দুর্ঘটনা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, তা দেশের প্রতিদিনের দুর্ঘটনার চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। এক হিসেবে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে দেশে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারায়। আহতের সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ। নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত সমস্যা, পরিকল্পনা ও নীতির দুর্বলতা, অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা ত্বরান্বিত করছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এক বছরে প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। আহত হয় এক লাখ। এদের বেশিরভাগই পঙ্গুত্ববরণ করে।

সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে না। এবারের ঈদে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে গাড়ির বেপরোয়া গতি, সঠিক গতিতে গাড়ি চালাতে বাধ্য করতে হবে চালকদের।  ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে পথচারী চলার উপযোগী করতে হবে। তুলে দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন । রাস্তা চলাচলে আইন অমান্যের জন্য আরও কঠিন শাস্তি ও জরিমানা আদায় করতে হবে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ফলে আগে যাওয়ার প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, চালকের মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশ যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের। আমরা এ ধরনের করুণ মৃত্যু আর দেখতে চাই না।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।