মানবিকতার উন্মেষ ঘটুক


প্রকাশিত: ০৪:৩১ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যে পিতা-মাতা এক সময় সন্তানের ভরসাস্থল সেই পিতা-মাতাকেই কিনা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এও এক নিষ্ঠুর অমানবিক বাস্তবতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যেখানে পিতা-মাতা ভাইবোন সন্তানসন্তুতি মিলে যৌথ পরিবারে সবাই মিলে মিশে বাস করে, সেখানে এ ধরনের পিতা-মাতাকে বয়স হলেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হবে- এ কেমন কথা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পিতা-মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতা-মাতাকে ছুড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়। তখন এসব পিতা-মাতার দুঃখের কোনো অন্ত থাকে না।

বিশেষ কোনো দিন এলে তাদের কষ্টের যেন সীমা থাকে না। সারাদিন স্বজনদের অপেক্ষায় থাকেন বৃদ্ধাশ্রমবাসী। সরাসরি দেখতে না পারলেও অন্তত একবার ফোনের আশা করেন। কিন্তু সবই মিছা। শেষ পর্যন্ত চোখের জলে সান্ত্বনা মিলে তাদের। আপনজনদের এমন আচরণে শুধু চোখের জলে ভিজে ঈদ উদযাপন করতে হয় তাদের। সারাদিন কক্ষের বারান্দায় পাঁয়চারি করে সময় কাটান। যদি সন্তান-স্বজনরা একবার আসে। যতই মান অভিমান করুক না কেন নাড়ি ছেঁড়া ধন সন্তানদের পিতা-মাতা ভুলতে পারেন না কখনোই। সন্তানদের একবার দেখার জন্য ব্যাকুল থাকেন সবসময়। কিন্তু সেই সন্তানরা একবারও বৃদ্ধ পিতা-মাতার খোঁজ নেয় না। সাধারণ দরিদ্র পরিবারের বয়স্করা যেমন আছেন এসব বৃদ্ধাশ্রমে তেমনি ধনাঢ্য পরিবারের অনেক প্রবীণ ব্যক্তিও আছেন। কিন্তু সবার অবস্থা আজ এক। সবাই অসহায়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সবাই বৃদ্ধ হবেন। আজ যে টগবগে তরুণ বয়সের ভারে সেও এক সময় ন্যুব্জ হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস হচ্ছে এই কথাটি কেউ মনে রাখে না। আজ বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে যে সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে কাল সেও যে তার সন্তান দ্বারা একই আচরণের শিকার হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? প্রবীণরা তাদের সমগ্র কর্মময় জীবন নিজ নিজ পরিবার গঠনে ও উন্নয়নে এবং সমাজ জাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করে বার্ধক্যে উপনীত হন। কিন্তু এই সমাজ তাদের কথা মনে রাখে না। ফলে শেষ বয়সে তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তানরা তাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করার কথা। একান্নবর্তী পরিবারের সংস্কৃতি এটাই। কিন্তু সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সমাজব্যবস্থা। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মূল্যবোধও। নানা বাস্তবিক কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাই পিতা-মাতার স্থান হচ্ছে না সেখানে। অনেক পরিবারেই পিতা-মাতার ভরণ-পোষণকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এ কারণেই ঝুট-ঝামেলা এড়াতে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাদের জীবন কীভাবে কাটে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়াটাও অনেকে প্রয়োজন মনে করে না।

এই নিষ্ঠুর অমানবিকতা মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে না। এছাড়া আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও তা সমর্থন করে না। এমনকি ঈদ কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনেও পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেয়া হবে না এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারেরও কি করণীয় কিছু নেই? পিতা-মাতার ভরণ-পোষণেও সন্তানদের বাধ্য করতে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে সরকার। কিন্তু আইন প্রণয়ন করেই কি পরিস্থিতির উন্নতি করা যাবে? মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের অনুশীলন এক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য। সমাজের একজন প্রবীণও যেন অবহেলা অনাদরে জীবন যাপন না করে সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।  

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।