স্বপ্ন যাবে বাড়ি : স্বপ্ন কি বাড়ি যায়?


প্রকাশিত: ০৪:১৮ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফোন কোম্পানির ঐ বিজ্ঞাপনটা দারুণ তাই না? স্বপ্ন যাবে বাড়ি আবার। একবার ঈদে ঘরে ফেরার স্টোরিতে এই গানটা ব্যবহার করেছিলাম। নিউজ এডিটর রাগারাগি করেছিলেন। বলেছিলেন, :আরে আপনি তো ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন করে দিলেন।" আমিও দাঁতে জিভ কেটেছিলাম। আসলেই তো। গানটা এত্ত সুন্দর। ব্যবহার করতেই মন চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বপ্ন কি আসলেই বাড়ি যায়? কিভাবে কিভাবে যায়?

এ শহরের মানুষদের কোনোদিন শান্তি নেই। গ্রীষ্মে শান্তি নেই, বর্ষায় শান্তি নেই, ভাদ্রের ভ্যাঁপসা গরমে শান্তি নেই, শীতে শান্তি নেই (গ্যাস থাকে না চুলায়, ভোর চারটায় উঠে নারীদের রাঁধতে হয় ভাত) তো এই মানুষেরা দুইটা ঈদে গ্রামে যায়। কিভাবে যায়? কিভাবে যায় তা সত্যিই বিস্ময়। আজকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে বিদেশিদের ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। তারা ঢাকার মানুষের গ্রামে যাওয়ার ছবি তোলে। তাদের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে বিস্ময় আর শ্লেষের হাসি। মানবসন্তান এইভাবে ওঠে যানবাহনে-এইটা তাদের জন্য বিস্ময়।

আমার লজ্জ্বা লাগে। দুইটা বড় পার্বণ এদেশে। দুই ঈদে মানুষ যায় গ্রামের বাড়ি। কিভাবে যায়? আপনি কমলাপুর রেলস্টেশনে যান, দেখবেন- ছোট শিশু নিয়ে স্বল্পআয়ের অসংখ্য মানুষেরা কোনো একট ট্রেনের বগীতে উঠার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি একবার দেখেছিলাম মাত্র দুদিন আগে বাচ্চা হয়েছে এমন এক নারী তার বাচ্চা নিয়ে স্বামীর সাথে কোনো একটা বগীতে উঠতে চাইছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে আছে তার মুখ। আমি আর আমার ক্যামেরাপার্সন নিজেদের কাজটাজ বাদ দিয়ে টেলিভিশনের বু্ম দেখিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে মহিলাকে ভিড় ঠেলে বগীতে তুলি। ক্যামেরাপার্সন রীতিমতো গজগজ করে বলে, "আপনাদের এতো শখ ক্যান? দুইদিন আগে মাত্র বিয়াইছেন এখন এই ভিড়ে গ্রামে আপনাদের যাওয়াই লাগবে ক্যান?"

মহিলাটি লজ্জ্বা পায়। কেন বাড়ি যাওয়াই লাগবে সে উত্তর সেই সময় ভিড়ের মধ্যে আর পাওয়া যায় না। কিন্তু তার লজ্জ্বিত মুখখানি মনে আছে। রেলমন্ত্রী সকালবেলা স্টেশন ভিজিট শেষে বলেন, যাত্রী সেবার সর্বোচ্চ  চ্যাষ্টা কইরতেছি। আমাদের মহাসড়কগুলোতে ভিড় লেগে থাকে। বর্ষা হলে ভেজা রাস্তার জন্য যানজট, শীত হলে কুয়াশার জন্য যানজট আর কোরবানির ঈদ হলে পথে পথে গরুর হাটের মজমায় আটকে থাবে দূরপাল্লার গাড়ি। ঈদের আগে কোথাও কোথাও মহাসড়ক বন্ধ করে বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের ট্রেন্ডও চালু হয়েছে আজকাল। ফলে বাসযাত্রীদের যানজটে আটকে থাকাটা অনিবার্য। আর যা কিছু অনিবার্য মানুষ ক্রমাগত তা মেনে নিতেই থাকে। আমরা টেলিভিশনওয়ালারা নিদারুণ উত্তেজনায় যানজটের খবর লাইভ করি যেন উৎসব। এখন কথা হলো মাত্র দুইটা পার্বণ। দুইবার একসাথে এত মানুষ যায় গ্রামে। এবং বছরের শুরুতেই মোটামুটি জানা যায় কবে কবে হবে ঈদ। তাহলে আমাদের দক্ষ যোগাযোগমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, শ্রমিকের জান শাহজাহান খান নৌমন্ত্রী সর্বোপরি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রটা কি পারে না ব্যবস্থাটার কোনো উন্নতি করতে? যদি না-ই পারেন,  তাহলে অন্তত: দায়টাতো স্বীকার করতে পারেন।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।