লবণের ওপর মূল্যবৃদ্ধির ভূত!


প্রকাশিত: ০৬:২৩ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আমাদের দেশে দ্রব্যমুল্যের পাগলা ঘোড়া সব সময় দাপিয়ে বেড়ায়। কখন যে কোন পণ্যের ওপর আছর পড়ে সেটা বলা মুশকিল। তবে মওকা বুঝেই যে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয় সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কখন কোন পণ্যের দাম বাড়ালে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে সেটি নিয়ে যেন রীতিমত গবেষণা করা হয়। আর তার গিনিপিগ হয় সাধারণ মানুষ।

লবণের কথাই ধরা যাক। আসন্ন ঈদকে সামনে দেশের বাজারে লাফিয়ে বাড়ছে অপরিশোধিত লবণের দাম। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে পরিশোধিত লবণের দাম বাড়ছে। ভালো মানের প্যাকেটজাত খাবার লবণের কেজি ৪২ টাকায় পৌঁছেছে।  এছাড়া চামড়া প্রক্রিয়ার জন্য গত বছর যে লবণের প্রতি মণের দাম ছিলো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এবার ওই লবণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। সে কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ায় লবণ কম দেবে। ফলে অনেক চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা চামড়া শিল্পের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে।  দেশে এমন কি সংকট হয়েছে যে হঠাৎ করে  লবণের দাম আকাশচুশ্বি হবে?এগুলো দেখার কি কেউ নেই। যে যেমন পারছে ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনতিবিলম্বে এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।

লবণ একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। সবকিছুতেই লবণ লাগে। তাই লবণের দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে সর্বত্র। লবণের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। দাম বাড়ার জন্য সরবরাহে ঘাটতি এবং আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি আমদানির বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে দেশে বছরে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণের চাহিদা রয়েছে। আর গত বছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে এক বৈঠকে সাড়ে ৩ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় লবণ কমিটি। সাধারণত আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয় দেশিয় শিল্প-পণ্য রক্ষার জন্য। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু এতে উৎপাদনকারী কৃষক খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না-এমন অভিযোগও আছে।

লবণ আমদানি নিয়ন্ত্রণে চাষী, মিল মালিক বা সাধারণ মানুষের চেয়ে উপকূলীয় এলাকার  প্রভাবশালীরাই লাভবান হচ্ছে। এ জন্য তো সবার আগে প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমদানি করার শর্টকাট রাস্তায় তো কোনো স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। এক্ষেত্রেও তো লাভটা ব্যবসায়ীদের পকেটেই যায়। ক্রেতারা তো কিছু পায় না।   ঈদুল আজহায় লাখ লাখ পশু কোরবানি হয়। আর পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য বিপুল পরিমাণ লবণ লাগে। অভিযোগ রয়েছে এই সুযোগে টুপাইস কামিয়ে নিতে চাইছে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিভাবে লবণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যায় তা ঠিক করতে আগামীকাল বুধবার ব্যাবসায়ীদের ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাদের সাথে বসে লবণের মূল্য একটি সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট যেন কোনোভাবেই মানুষের পকেট কাটতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।