সাথীর আত্মহত্যার দায় নেবে কে?


প্রকাশিত: ০৩:৪১ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঝরে গেল আরো একটি সম্ভাবনাময় প্রাণ। চাঁদপুরে সাথী আক্তার (১৪) নামের এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করায় আগের দিন বিদ্যালয়ে সাথীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে অপমানিত হয়ে গত সোমবার সে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগ, স্কুলের মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিসহ ছিল ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ৩২০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। বকেয়া ৮০ টাকার জন্য সাথীকে সাজা দিয়েছিলেন মো. আলাউদ্দিন। এতে অপমানিত বোধ করেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সাথী। ফির জন্য এভাবে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিতে পারেন একজন শিক্ষক-এটা ভাবাও যায় না। তাছাড়া ফি দেওয়ার দায়িত্বও তো শিক্ষার্থীর নয়। শিক্ষকের কাছ থেকে মানবিক আচরণই প্রত্যাশিত। সেটি যদি হত তাহলে সাথীকে হয়তো অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হতো না।

স্কুল-কলেজে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০১০ সালে। শাস্তি দিলে উল্টো শিক্ষকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপরও কি করে ঘটছে এসব অমানবিক ঘটনা সেটি দেখার বিষয়। এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়- কোনো শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের দৈহিক আঘাত, অশালীন মন্তব্য, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করতে পারবেন না। মানসিকভাবেও ছাত্রছাত্রীদের কোন নির্যাতন করা যাবে না। শিক্ষকতার পেশা মহান। যারা শিক্ষাদানকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন সমাজের চোখে তারা মর্যাদাবান। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তারা আদর্শস্থানীয়। শিক্ষকের আচার-আচরণ দ্বারা ছাত্রছাত্রীরা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। এজন্য তাদের হতে হয় দায়িত্বশীল। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের ভুলত্রুটি ধরার চেয়ে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার দিকেই জোর দেয়া উচিত।

একজন স্নেহপ্রবণ শিক্ষক ক্লাসের দুর্বল ছাত্রটির কাছ থেকেও সহজেই পড়া আদায় করতে পারেন। কিংবা দুষ্টু ছাত্রকে বশে আনতে পারেন। জোর করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করা যায় সেটা ভাবা উচিত। ছাত্রদের পেটানো, বেত মারা, শারীরিকভাবে আহত করা এগুলো বর্তমান দুনিয়ায় চিন্তাও করা যায় না। শাসন করতে হলে সোহাগ করতে হবে আগে। তবে শাসনের সীমারেখা সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। তারা যদি সব জানবেই তাহলে তো আর বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। ছাত্রছাত্রীদের ভুল হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের ভুলত্রুটি  শোধরানোর দায়িত্ব তো শিক্ষকদেরই। এজন্যই তো শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।

দুঃখজনক হচ্ছে সেই কারিগরদের ভুলের কারণেই একজন শিক্ষার্থীকে অকালে চলে যেতে হলো। এতে পরিবারটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে?  এটা স্পষ্টতই আত্মহত্যার প্ররোচনার মতো বড় অপরাধ। এজন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমরা চাই এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু আইন করলেই হবে না- প্রতিষ্ঠানগুলো তা কতোটা মেনে চলছে সেটিও দেখতে হবে।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।