উৎকণ্ঠা নয় প্রস্তুতিই জরুরি


প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ভূমিকম্পে আবারো কাঁপলো দেশ। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে অনুভূত হওয়া শত্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫২৬ কিলোমিটার দূরে। উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। এরপর রাত ৭টা ৫০ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। এ ছাড়া ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ওয়েব পোর্টাল সিএসইএমের তথ্য অনুসারে গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১২ ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৯২ বার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪২ বার ভূমিকম্প হয় ইতালির বিভিন্ন এলাকায়। বেশি হয় মধ্য ইতালিতে। ইতালিতে ভূমিকম্পে ২৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৩৬৮ জন আহত হয়েছেন।   বাংলাদেশে মাত্রা কম থাকায় বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।  নিতে হতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত- এ কথা অনেকদিন ধরেই বলা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি কতোটুকু এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। অতিসম্প্রতি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালের একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক খবর। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে অনিবার্য দুর্যোগ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করাই হবে যুক্তিযুক্ত। বার বার ভূমিকম্পের আঘাত আমাদেরকে সতর্ক বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইরান এবং বাংলাদেশ। সেদিক থেকে আমাদের প্রস্তুতি কতোটা এ নিয়ে জোরেশোরে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যার পূর্বাভাস এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারছে না। তবে নানা গবেষণায় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে বার বার। বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ এখন কোনোমতেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ গত ৮০-৮১ বছরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্লেট যাচ্ছে উত্তর দিকে, আর উত্তর দিকে আমাদের ইউরেশিয়ান প্লেট। দুটি প্লেট ধাক্কা দিচ্ছে, আর তাতে করে এর বাউন্ডারিতে এনার্জি স্টোর হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পরপর প্রেসারটি রিলিজ করার জন্য জায়গাটি নড়ে যায়, আর তখন ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা যেন ভূমিকম্প নামক মহাবিপদ ডেকে আনছি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক। একই সাথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূকম্পনেও বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বার বার ভূমিকম্প এ কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে,  দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আসলে কতোটা প্রস্তুত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। অল্প জায়গায় এতো বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয় বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। এতে স্বল্পমাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে অনেক ভবন। এছাড়া ভূমিকম্পপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রকৃতির ওপর অবিচার করে নিজেরাই যেন ভূমিকম্প ডেকে না আনি সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।