সবার আগে নিরাপত্তা
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সোমবার রাতে ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেজনক। বাংলাদেশে এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রথম। সার কারখানায় গ্যাসের রিজার্ভার বা ট্যাংক বিস্ফোরণের পর পর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস। সোমবার রাত সোয়া ১০টায় দুর্ঘটনার পর আনোয়ারাজুড়ে বাতাসে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬০০ পিপিএম। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে সার কারখানার ১৫ নিরাপত্তাকর্মীসহ শতাধিক এলাকাবাসী। তাদের মধ্যে ৩৮ জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন।
গ্যাসের রিজার্ভারটি বিস্ফোরিত হয়ে ছিটকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এতে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গবাদি পশু মারা গেছে। জলাশয়ে মাছ মরে ভেসে উঠছে। গাছ-গাছালিও মরে যাচ্ছে। এর ক্ষতি আরো সুদূরপ্রসারী হবে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
এত বড় গ্যাস দুর্ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম; কয়েক বছর আগে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে দুটি কারখানায় অ্যামোনিয়া ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটলেও এতে ৪০ থেকে ৫০ লিটার গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে অ্যামোনিয়া গ্যাস থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে পড়ে। এতে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।কারখানায় অগ্নিনির্বাপণে দক্ষ জনবল এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি যে নেই সেটা প্রমাণ হয়েছে এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য সার কারখানায় একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি থাকার কথা থাকলেও তা বর্তমানে নেই।
আমাদের শিল্প খাতের নিরাপত্তাব্যবস্থা আধুনিক ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে হয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি বা দুর্ঘটনা এড়াতে তেমন কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা থাকে না। যার ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতোটা মনোযোগ থাকে নিরাপত্তার দিকে তারা ততোটাই উদাসীন থাকেন। এটা কাম্য হতে পারে না। এ ঘটনায় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
এইচআর/আরআইপি