অদম্য সোহেল রানারাই আগামীর বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ০৬:৫৩ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৬

‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান্।/ তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান`।- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় দারিদ্র্যের জয়গান গেয়েছেন। দারিদ্র্যকে অতিক্রম করেই কবি তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন। জীবনে নানা বাধা আছে। আছে ঘাত প্রতিঘাত। এগুলো জয় করে এগিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে জীবনের ধর্ম। যারা তরঙ্গক্ষুব্ধতার সঙ্গে লড়াই করে, জীবনে তারাই এগিয়ে যায়। এমনি এক জীবন সংগ্রামী হচ্ছে নলছিটি উপজেলার সোহেল রানা। এই বয়সেই জীবন তার কাছে এক সংগ্রামের নাম। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হলেও সে থেমে থাকেনি। তাই সাফল্যের দেখা পেয়েছে।  সংসারে অভাব অনটনের কারণে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সোহেল রানা। নলছিটি ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি জিপিএ ৫ পান। লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। হার না মানা পরিশ্রম ও প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই তাকে সফলতা এনে দেয়।  সমাজে এ ধরনের সোহেল রানাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা  পেলে  যে এরা অনেকদূর এগিয়ে যাবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

নলছিটি শহরের খাসমহল বস্তিতে ছোট একটি খুপড়ি ঘরে বাসবাস করে তারা। বাবা মা ও চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। তাই দায়িত্বটাও বেশি। অনগ্রসর মানুষের মধ্যে বসবাস করেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ ছিল তার। সংসারে খরচ জোগানোর দায়টা বাবা তোফাজ্জেল হোসেনের একার ওপরই ছিল। বাবার কষ্টের কথা বিবেচনা করে ছোট থেকেই লঞ্চঘাটে ছোট একটি চায়ের দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করতো সে। বাবার কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বেশির ভাগ সময়ই দোকানে কাজ করতে সোহেল রানা। রাতে বাবাকে বিশ্রামের জন্য বাসায় পাঠিয়ে নিজেই সকালের পরাটা বানানোর খামি তৈরি করতো। দোকানের কাজ সেরে বাসায় ফিরে লেখাপড়া করতে করতে সকাল হয়ে যেতো। আবার সকালে ঢাকার লঞ্চের যাত্রীদের কাছে চা ও পরাটা বিক্রি করার জন্য ছুটে আসতে হতো দোকানে। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি, এমন সময়ও পার করেছে সোহেল রানা। পরীক্ষার আগেও ক্লাস শেষ করে অনেক সময় কলেজের সামনেই চৌকি বসিয়ে জিলাপি, ছোলা ও পিয়াজু ভেজে তা বিক্রি করতো সে। তবুও সে থেমে যায়নি। কোনো কাজকেই ছোট মনে করেনি সে।

সোহেল রানা দেখিয়ে ছিল ইচ্ছাশক্তি থাকলে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে যেতে পারে মানুষ। দারিদ্র্য তাকে দমাতে পারেনি। সমাজের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হচ্ছে সোহেল রানা। ভবিষ্যতে সে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করতে চায়। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করাই তার জন্য এখন চ্যালেঞ্জ। ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া,  তার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য দরকার অর্থের। কিন্তু এ রকম এক উজ্জ্বল প্রতিভা হারিয়ে যাবে সেটা হতে পারে না। সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের দায়িত্ব রয়েছে এ ব্যাপারে। জঙ্গিবাদ, মাদকসহ নানা অপরাধকর্মে যখন নষ্টভ্রষ্ট তারুণ্যের নাম আসে তখন সোহেল রানারাই আসলে আগামীর বাংলাদেশ। এদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়াটা তাই সমাজপ্রগতির স্বার্থেই অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।