সুবিদ আলী সমাচার


প্রকাশিত: ০৬:১৬ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৬

২০১৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের ২দিন আগে জেনারেল জিয়াউর রহমানের পুত্র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একটি দলীয় সভায় প্রথমবাবের মতো তার পিতা একদা সামরিক শাসককে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করেছিলেন। এরপর কয়েক দফা তিনি একই দাবি করেন। এক পর্যায়ে তার পাগলামী এতোই বেড়ে গেল যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে রাজাকারের সাথেও তুলনা করলেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে গত বছর জানুয়ারি মাসে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেকের বক্তব্য বিবৃতি সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

এবছর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর ২ দিনের মাথায় আওয়ামী লীগেরই সংসদ সদস্য যিনি আবার সামরিক বাহিনী থেকে এসে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি জেনারেল জিয়াকেই প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করলেন। ভদ্রলোকের নাম সুবিদ আলী ভুঁইয়া। তিনি আবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও। বুধবার ওই কমিটির বৈঠকে জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করে চরম আপত্তির মুখে পড়েও তিনি অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের লেখায় জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বর্ণনা করায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ব্যাখ্যা চায় না কেন জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান কিছু বলার আগেই সুবিদ আলী বলে ওঠেন, জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম  রাষ্ট্রপতি। এটা তিনি তার বইতেও লিখেছেন।” এরপর আওয়ামী লীগের অন্য সংসদ সদস্যরা তাকে ভৎর্সনা করেন। কেউ কেউ তাকে জিয়ার সৈনিক বলেন, কেউ বলেন সুবিধা নিতে তিনি আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন। কেউ বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করেন না।

যে কথা বলায় তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ নেতারা পাগল, উদ্ভট, বিকৃত মস্তিষ্ক বলে মন্তব্য করেছেন। যে কথা বলায় খালেদা জিয়ার সমাবেশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ সে কথা যখন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য বলেন তখন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখার বিষয়।

৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে জিয়ার অধীনে থাকা ও খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করা সুবিদ আলী ভুঁইয়াকে জেনে শুনেই আওয়ামী লীগ দলে টেনে নিয়েছে। তিনি বিএনপি থেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২০০১ সালে। কিন্তু তার আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ থাকায় তাকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ ছিল না। তখন তিনি স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরেছিলেন মোশাররফ হোসেনের কাছে। তাকেই আওয়ামী লীগ টেনে নেয় ২০০৮ সালে। এবং নৌকা প্রতীকে জয়ী হন তিনি। নবম সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর এবার দশম সংসদে নির্বাচিত হয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হন সুবিদ আলী।

তার মত একজন ব্যক্তি যখন বলেন জিয়াই প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং এ নিয়ে আপত্তি করার পরও যখন তিনি অনড় থাকেন তখন বুঝতে হবে তিনি তারেকের কথাই বলছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারেক বলতে পারছেন না এখন সেই কাজটি করে দিচ্ছেন সুবিদ আলী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লতিফ সিদ্দিকী হজ্ নিয়ে কথা বলে মুসলমানদের অন্তরে আঘাত দিয়েছেন এমন অভিযোগে যদি জেলে যেতে পারেন, দল ও মন্ত্রিত্ব দুই জায়গা থেকেই বাদ পড়তে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী সমর্থকদের অন্তরে আঘাত দেওয়ার শাস্তি সুবিদ আলীকে কী দেওয়া হয় সেটিও দেখতে হবে।

একই কথা লেখায় গত ১ জুলাই ছাত্রলীগ সারাদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘেরাও করে রেখেছিল, পরে লেখক রেজিস্ট্রারকে সরাতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ, এবার ছাত্রলীগ কাকে ঘেরাও করে এবং এর প্রতিক্রিয়া কী হয় সেটাও দেখার বিষয়। ২০১৪ সালে তারেক রহমানের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন এসব অর্বাচীন ইতিমধ্যে ইতিহাস বিকৃতকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  প্রশ্ন হলো সুবিদ আলীকে অর্বাচীন বলবেন কিনা মোহাম্মদ নাসিম।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, এ ধরনের বক্তব্য ইগনোর করা ছাড়া কোন অভিব্যক্তি তার নেই। এ ধরনের কথা যারা বলতে পারে তাদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা উচিৎ। তাদের জিজ্ঞাসা করা উচিৎ, বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানানোর জন্য তারা এসব কথা বলছেন কিনা!

এখন সুবিদ আলী ভুঁইয়ার মস্তিষ্ক পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবেন কিনা আইনমন্ত্রী, সেই অপেক্ষায় থেকে শুধু অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলি আওয়ামী লীগের খন্দকার মুশতাকের প্রতিবেশী সুবিদ আলী ভুঁইয়া।

লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।