হাতির জন্য ভালোবাসা


প্রকাশিত: ০৬:১৭ এএম, ১৬ আগস্ট ২০১৬

শত চেষ্টার পরও বাঁচিয়ে রাখা গেল না ভারতের আসাম থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসা দলছুট হাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’কে। আজ মঙ্গলবার ভোরে হাতিটি মারা গেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই সংবাদ শিরোনাম ছিল এই হাতিটি। হাতিটির মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু একে ঘিরে যে মানবিকতার উন্মেষ দেখা গেল তা এক কথায় অভূতপূর্ব। এই মানবিকতার বোধ ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র।

গত ২৮ জুন ভারতের আসাম থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসে দলছুট বন্যহাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’। এরপর ৪৫ দিনে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে ঘুরে বেড়ায় হাতিটি। এরই মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ মাইল পথ পাড়ি দেয় হাতিটি। এ সময় খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় ৫ টন ওজনের হাতিটি দিন দিন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে এটি উদ্ধারে গত ৪ আগস্ট ভারত থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসে, কিন্তু তারা হাতিটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। এরপর হাতিটি উদ্ধারে নামে বাংলাদেশের উদ্ধার অভিযান দলের সদস্যরা। তারা পর পর তিনবার হাতিটি ট্রাঙ্কুলাইজ করতে ব্যর্থ হয়।

গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার অভিযান দলের প্রধান ড. তপন কুমার দের নেতৃত্বে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে হাতিটি ট্রাঙ্কুলাইজ করতে সক্ষম হন তারা। সে সময় হাতিটির নাম দেয়া হয় ‘বঙ্গ বাহাদুর’। এরপর থেকেই হাতিটি ওই গ্রামের রহিম মাস্টারের বাড়ির পেছনের একটি বড় আম গাছের সঙ্গে রশি এবং লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। রোববার থেকে হাতিটি খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করায় প্রচণ্ড গরম আর পায়ের মোটা শিকল-রশির শক্ত বাঁধনের কারণে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে। সেখানেই হাতিটি আজ ভোরে মারা যায়।

কথায় আছে ‘বনেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। যার যেখানে থাকার কথা সেখানেই সে নিরাপদ। বন্যার কারণে দলছুট হয়ে বাংলাদেশে এসেছিল হাতিটি। সত্যি বলতে কি বন্য প্রাণির জন্য দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে তাদের আবাসস্থল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেও বন্য প্রাণিরা এখন অসহায়। অব্যাহতভাবে বন ধ্বংসের কারণে খাদ্য ও বাসস্থান সঙ্কটে পড়ে বন্য প্রাণি লোকালয়ে এসে পড়ছে। এরফলে দেখা দিচ্ছে নানা বিপর্যয়। কিন্তু এই পৃথিবী যে কেবল মানুষের জন্য নয় অন্যান্য জীব-জন্তু-বৃক্ষ-নদী-সাগর সব মিলিয়েই মানুষের জীবন। মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। নানা হতাশার মধ্যেও আশার কথা হচ্ছে,  মানুষ যখন মানুষকে বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে তখন প্রাণির প্রতি এই মমত্ববোধ সত্যিই বিরল ও আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয় হওয়া উচিত।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।