শিশুর জন্য বাসযোগ্য সমাজ চাই


প্রকাশিত: ০৬:২১ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৬

কবি সুকান্ত এই পৃথিবীকে শিশুর জন্য বাসযোগ্য করার কথা বলেছিলেন তার কবিতায়। কিন্তু শিশুর জন্য নিরাপদ পৃথিবী কি এখনো গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে? আমাদের দেশের দিকে তাকালেও এক বিবর্ণ চিত্রই পাই আমরা। অথচ যে সমাজে শিশু নিরাপত্তা পায় না, তার পরিচর্যা হয় না, সেই সমাজ কিন্তু বেশিদূর এগুতে পারে না-যতই আমরা উন্নয়ন প্রগতির কথা বলিনা কেন।

আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার, গতকালই দেশে প্রথমবারের মত আটলেন মহাসড়কের উদ্বোধন হল। সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কতোটা হয়েছে সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। বরং উল্টো দেখা যাচ্ছে ভেঙে যাচ্ছে পরিবার প্রথা, মূল্যবোধের অবক্ষয় সর্বত্র। আর এর শিকার হচ্ছে শিশুরা। সিলেটের রাজন, রাকিবদের হত্যা করা হচ্ছে পৈশাচিক কায়দায়। এমনকি পরিবারেও এখন শিশু নিরাপদ নয়। নিজ গৃহকোণ হয়ে উঠেছে শিশুর জন্য মৃত্যু গহ্বর। নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠছে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি। মানবিকতার কতোটা  অবলুপ্তি ঘটলে এই আত্নবিনাশের ঘটনা ঘটে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।

এবার রাজধানীর বাসাবো এলাকায় দুই শিশুর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হল। ঘটনার পর থেকে তাদের মায়ের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল শনিবার সকালে বাসাবো এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে পুলিশ। আত্মীয়স্বজনরা ধারণা করছেন, ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ এই মা শিশুদের হত্যা করে থাকতে পারে। এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় রহস্যজনকভাবে হত্যার শিকার হয় আরো দুই শিশু। বাসাবোর ঘটনাটিও রহস্যজনক। সেখানেও হত্যার অভিযোগের তীর ওঠে মায়ের দিকেই। সেই রহস্যের কিনারা না হতেই আবারো ঘটলো পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড।  
দুঃখজনক যে,  দেশে শিশু হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। ২০১২ সালে ২০৯টি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২১৮টিতে। ২০১৪ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ৩৬৬টি শিশু। ২০১৫ সালে ২৯২টি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছে ৪৯টি শিশু। দেখা যাচ্ছে শিশুবান্ধব সমাজ থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে।

সমাজের সর্বত্র চলছে অস্থিরতো। ভাঙন দেখা দিয়েছে পরিবার প্রথায়। এর শিকার হচ্ছে শিশুরা। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি খুঁজে বের করতে হবে কেন আপনজনরাই হন্তারক হয়ে উঠছে শিশুর? কি পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাদের এই পথে ধাবিত করছে। মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’ হলে তার হাতে কেউ নিরাপদ নয়, তার চিকিৎসার প্রয়োজন। তেমনি সমাজও দেহের অসুখেরও চিকিৎসা করাতে হবে। মূল্যবোধের উন্নেষ ঘটাতে হবে যেখাবে শিশুরজন্য একটি নিরাপদ বাস গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।