ভোক্তাস্বার্থ দেখবে কে?
হঠাৎ করেই চিনির দাম বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগেও যে চিনি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে স্থানীয় বাজারেও তা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ চিনি আমদানির জন্য যখন এলসি খোলা হয় তখন দাম স্বাভাবিক ছিল। এছাড়া নতুন দামের চিনি এখনো বাজারে এসে পৌঁছেনি। এরপরও মূল্যবৃদ্ধি মুনাফালোভী মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু একটি সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের মানসিকতা থাকা উচিত নয়। দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখার জন্য সবারই কিন্তু দায়িত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন এটাই কাম্য।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নাগালের মধ্যে রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। মানুষজন এমনিতেই নানা সংকটে আছে। দেশের একটা বড় অংশ ভাসছে বন্যার পানিতে। এ কারণেও পণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। এটা যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবেই দেখা দিয়েছে। এটা ঠিক মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে খুব একটা নেই। তবে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ যদি ঠিক রাখা যায় তাহলে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। এ জন্য টিসিবিকে কার্যকর করে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার কথা বার বার বলা হলেও কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। এ জন্য সিন্ডিকেট চক্রের পোয়াবারো। তারা যে কোনো উসিলায় যে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দুঃখজনক হচ্ছে দেশীয় শিল্পের প্রতি আমরা বরাবরই ঔদাসীন্য দেখিয়েছি। আমাদের উৎপাদিত চিনি গুদামে পড়ে থাকে আর আমদানি করা চিনি বিক্রি হয় উচ্চ মূল্যে। একদিকে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে দেশীয় শিল্প মার খাচ্ছে। এই বৈপরীত্যের কোনো মানে হয় না। পরিসংখ্যান মতে দেশে চিনির সর্বোচ্চ চাহিদা ১৫ লাখ টন। চলতি বছর এলসিও করা হয়েছে ১৫ লাখ টনের। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে উৎপাদিত হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টন চিনি। দেখা যাচ্ছে চিনি উদ্বৃত্তই থেকে যাবে। এরপরও দাম বাড়ে কিভাবে?
সিন্ডিকেটধারীরা ওঁৎ পেতে থাকে সব সময়। তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়। তারা যাতে সেই সুযোগ নিতে না পারে এ জন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তাছাড়া বাজারে টিসিবির মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহও ঠিক রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভী মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে শুধু মুনাফার লোভ কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকার, ব্যবসায়ীমহলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। ভোক্তাস্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
এইচআর/পিআর