‘বেঙ্গল’ নামের মাহাত্ম্য


প্রকাশিত: ০৬:২৯ এএম, ০৩ আগস্ট ২০১৬

আমি পূর্ব বাংলার পরিবারের মেয়ে। বিবাহ সূত্রে পশ্চিম বাংলার পরিবারের বধূ। দুই বাংলার মধ্যেই যোগ অত্যন্ত নিবিড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। আমাদের রাজ্য ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ এবং বাংলা ভাষায় ‘বাংলা’ অথবা ‘বঙ্গ’ বলে পরিচিত হবে। সাহিত্য এবং ইতিহাস দু’দিক থেকেই আমাদের পরিচয় এই দু’টি নামের সঙ্গে জড়িত। আজকের এই নামবদলের প্রস্তাব আমাকে আনন্দিত ও পুলকিত করেছে।
কেউ হয়তো বলতে পারেন, যে কারণে আমরা পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম, নাম বদলের ফলে কি সেই ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করা হবে না? কিন্তু সেই ইতিহাস তো বড় বেদনাদায়ক! সর্ব ক্ষণ হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর কী প্রয়োজন? তা ছাড়া ইতিহাস তার নিজের নিয়মেই মাঝে মাঝে নাম পাল্টায়। দেশভাগের সময় আমরা হলাম ‘ইস্ট বেঙ্গল’ আর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’। বেশ কিছু কাল পরে ইস্ট বেঙ্গল হল ‘ইস্ট পাকিস্তান’। তার পর জন্ম হল বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের জন্ম এ-পার বাংলার মানুষের কাছেও ছিল বড় আনন্দের দিন। দুই বাংলার কাছেই ভাষা ও সংস্কৃতির জয় হিসেবে গণ্য হয়েছিল সেই দিনটি। মনে হয়েছিল, ‘ঘরের হয়ে পরের মতন, ভাই ছেড়ে ভাই ক’দিন থাকে।’ ওঁরা বাংলাদেশ নামটি নিলেন, সোনার বাংলা গানটি নিলেন। সদ্যোজাত বাংলাদেশের জন্য আমাদের সে দিন গর্ব ও আনন্দের সীমা ছিল না। তবু জনান্তিকে স্বীকার করি, হঠাৎ মনে হয়েছিল, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটা কি আর গাইতে পারব না?

বাংলাদেশের সকল বন্ধুদের প্রতি ভালবাসা জানিয়েও বলি, আজ যখন আমি গান করব ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী’, তখন একটু বাড়তি আনন্দ পাব। মনে হবে, ‘এ আমারই বাংলা রে।’ সরকারি তরফে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, বাংলা না বঙ্গ। বঙ্গ হলেও আপত্তির কোনও কারণ নেই— ‘বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার।’ খুব সূক্ষ্ম বিচারে বাছাই করতে হলে বলা যায়, ‘ল’ বর্ণটি থাকার ফলে বাংলা ভাষার লালিত্য একটু বেশি। আর যেমন আমরা বলি ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’, ঠিক তেমনই যদি বলতে চাই ‘বেঙ্গল দ্যাট ইজ বাংলা’, তবে তা বেশ শ্রুতিমধুর।

ইংরেজি ‘বেঙ্গল’ এই মুহূর্তে খুব সুপ্রযুক্ত। আমরা তো আন্তর্জাতিক ‘বে অব বেঙ্গল’-এর জন্য সুপরিচিত। আজকাল আমরা গ্লোবাল বেঙ্গল সামিট করছি। দেশবিদেশের লোক যোগ দিতে আসছে। আর
‘বিশ্ব বাংলা’ তো সর্বজনবিদিত।
‘বেঙ্গল’ নাম ইংরেজিতে অনেক দিন ধরেই পরিচিত। ইতিহাস বইয়ে দেশে বা বিদেশের পাতায় পাতায় বেঙ্গল বিরাজ করছে। আমরা বেঙ্গল রেনেসাঁসের জন্ম দিয়েছি। পাশ্চাত্যের সভ্যতাকে বেঙ্গল গ্রহণ করেছিল সর্বাগ্রে। তেমনই বেঙ্গলের ইয়ুথ বা তরুণ সমাজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে আঘাত করেছে সকলের আগে।

আমরা বিদেশি ভাষাকে সব সময় আপন করে নিয়েছি। ‘দিল্লি’র নামকরণও বিদেশিরা তাদের ভাষাতেই করেছিল। আজ যখন দিল্লি নাম উচ্চারণ করি তখন সে কথা মনেও পড়ে না। তাই কেউ কেউ যখন ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ না বলে ‘বাংলা’ বলা যায় কি না প্রশ্ন তোলেন, তার কোনও প্রয়োজন নেই। খুব সাধারণ বাঙালিও ‘বেঙ্গল’ বলেন। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে আমি যখন নির্বাচনী প্রচার করছি, তখন তেমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যাদবপুর এলাকার বহু মানুষ এক কালে উদ্বাস্তু হয়ে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের ভাষায় আছে পূর্ব বাংলার টান। আমার নির্বাচনী প্রচারের জিপ থামিয়ে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘‘জিতে দিল্লি গেলে ‘ব্যাঙ্গল’-এর কথাটা একটু মাথায় রাখবেন।’’ অর্থাৎ তিনি চেয়েছিলেন, যাতে বেঙ্গলের দাবিদাওয়া আমি কেন্দ্রের কাছে তুলি।
‘বেঙ্গল দ্যাট ইজ বাংলা’-র নামে জয়ধ্বনি দিয়ে নামবদলকে স্বাগত জানাই।

সূত্র : আনন্দবাজার

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।