বাংলার মায়েরাই পারবে


প্রকাশিত: ০৫:১০ এএম, ০২ আগস্ট ২০১৬

একুশে জুলাই আমার মায়ের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো। মায়ের জন্য তার স্কুলে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। বাড়ির মসজিদে দোয়া, কোরানখনি ও মিলাদ হয়েছে। আমার গ্রামের মানুষেরা আরও একবার স্মরণ করেছে তাদের পীর মাকে। এর বাইরে তাকে নিয়ে বাড়তি দুয়েকটি শব্দও উচ্চারণ করার নেই। তিনি মাদার তেরেসা, মালালা ইউসূফজাই, বেগম রোকেয়া, নূরজাহান বেগম বা সুফিয়া কামাল নন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পীকার বা বিশিষ্ট কেউই তিনি নন। তার জন্য আমি এর বাইরের বাড়তি কিছু চাইওনা।  

আর দশটি সন্তান যেমন করে তার মাকে স্মরণ করেন আমিও তাই করছি। তবে এবার এমন একটি সময়ে মায়ের স্মৃতি চোখের সামনে এলো যখন মনে হচ্ছে প্রতিটি বাঙালি মায়ের জেগে ওঠার সময় হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশটি শত্রুমুক্ত হবার পর ১লা জুলাই ১৬ ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ঘটনা ও শোলাকিয়া মসজিদে ঈদের দিনে হামলা করার সাথে জঙ্গীবাদের যে সূত্রগুলো স্পষ্ট করে জানা গেছে তাতে আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে আবার যেন মায়ের কোলে ফিরে যেতে হবে। আমার মায়ের কথাটি বলছি নিজের প্রজন্মের মায়েদের একজনকে প্রতীক করে আমাদের সকলের মায়ের কথা বলার জন্য। আমি নিজে মনে করি আমাদের মায়েদের চাইতে এখনকার মায়েরা আরও অনেক স্বর্ণগর্ভা। তারা আমাদের চাইতে অনেক মেধাবী সন্তানের জননী। তারা নিজেরাও অনেক মেধাবী। তারা তাদের সন্তানের অনেক বেশি যত্ন নেন। অনেক বেশি সচেতন। তবে তাদের জীবনধারা ও ভাবনাচিন্তায় সম্ভবত কিছু একটা ব্যতিক্রম ঘটেছে যা আমাদের প্রজন্মের মানুষদের মার কাছ থেকে তাদের শিখতে হবে। তারা এদের দাদী-নানী। আমি আমার মায়ের কথা খুব সংক্ষেপে বলছি। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলছি আমার বন্ধু বান্ধব ও প্রজন্মের মানুষদের প্রায় সবার মাকেই আমার মা প্রতিনিধিত্ব করেন।

আমার মা এক অসম সাহসী রমনীর নাম- রাবেয়া খাতুন। আমার নানা তাপসী রাবেয়া বসরীর নামে তার বড় মেয়ের নাম রেখেছিলেন। তার পরের দুই মেয়ে আছিয়া ও আয়েশা। ১৯৪৮ সালে ১৪/১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বাবার সাথে মার বয়সের ব্যবধান হয়তো প্রায় ২৫ বছর। এটি ছিলো বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। মায়ের বিয়ের এক বছর পরেই ১২ আগস্ট ৪৯ আমি জন্মাই। তখনও তিনি আমার নানার বাড়িতে থাকেন। কখনও শ্বশুর বাড়ি দেখেননি। আমি আস্তে আস্তে নানার বাড়িতে বড় হই-হাঁটতে শিখি-শ্লোগান দিতে শিখি-নুরুল আমিনের কল্লা চাই। খালা ও নানার কাধে চড়ে স্কুলেও যাই। বয়স সম্ভবত ৪ বছর। তখনই মা বেকে বসলেন। বাবার সাথে লড়াইতে নামলেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বাবাকে জানিয়ে দিলেন, তার বাবার বাড়িতে তিনি থাকবেন না, তাকে তার নিজের শ্বশুর বাড়িতে নিতে হবে। বাবার তখন আলাদা সংসার। তারা পাঁচ ভাই আমার দাদার সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। বাবার জমিজমা প্রায় শ খানেক বিঘা। ১৬০ শতাংশের বাড়ি। সব পতিত। কেউ দেখার নেই। কিন্তু বাবার আগ্রহ ছিলোনা মাকে সেখানে নেবার। প্রায় আদিবাসীদের কৃষি সমাজ, প্রচণ্ড প্রতিকূল অবস্থায় মা একা বাবার সংসারের দায়িত্ব নিতে পারবেন তেমনটি তার মনে হলো না। কিন্তু মায়ের জিদের কাছে হেরে গেলেন।

মাও জানতেন জঙ্গলে বাস করার মতো জীবন তিনি বেছে নিয়েছেন, একটি নাগরিক জীবনের বদলে। সেই সময়ে ৩ দিন লাগতো আশুগঞ্জ থেকে কৃষ্ণপুর যেতে। মা সেভাবেই গেলেন নেত্রকোণা জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। হাল ধরলেন তার নিজের সংসারের। এখনকার আইনে শিশু বয়সী মা তার নতুন সংসারকে সাজাতে গিয়ে দেখলেন তিনি কিছুই জানেন না। গোবরের চট লেপা, গরুকে খাবার দেয়া, কামলাকে ভাত-তরকারি রেধে দেয়া, নদী থেকে পানি আনা, কামলা মেয়েদেরকে দিয়ে কাজ করানো সবই অজানা। গ্রামের কেউ তার পাশে নেই। বাবা বাইরে বাইরে থাকেন-রান্না ঘর থেকে হাওরের জমি এবং সন্তানের লেখাপড়া একাই সামাল দেন। মাঝে মাঝে হাতে টাকাও থাকে না।

বাবা  বৈশাখ মাসে বাড়ি ফিরে গোলার ধানটা বেচে টাকাটা পকেটে করে আবার দেশে দেশে ঘুরতে চলে যেতেন। সুফিবাদে বিশ্বস্ত বাবা মার হাতে কি থাকলো সেটি কোনদিন জানতেনওনা। মা তার সহযোগী আব্বাস আলী কাকু ও তার ভাই আশরাফ আলী, জনাব আলীসহ কামলা--গোমস্তাদের দিয়ে সংসার সামলাতেন। মা প্রথমেই যে কাজটি করলেন, সেটি অসাধারণ। আমাকে গরু রাখতে রাখাল বানিয়ে মাঠে না পাঠিয়ে স্কুলে পাঠালেন। আমার গ্রামে তখন ২/৩ জন শিশু স্কুলে যেতোনা। মা যে কেবল স্কুলে পাঠালেন সেটিই নয়, সকালে মক্তবে পাঠাতেন ও সন্ধ্যায় নিজে পড়াতে বসতেন। এক সময়ে যখন দেখলেন নিজে পড়াতে সময় পান না বা পড়ানোটা তার সীমানার বাইরে তখন বাড়িতে একজন মাস্টার রাখলেন। তারপর তিনি গ্রহণ করেন একটি দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত।

প্রাইমারি পাশ করে ৪০ কিলোমিটারে যখন হাইস্কুল পেলাম না তখন ৪০ কিলোমিটার দূরের হাইস্কুলে বোর্ডিং-এ রেখে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মাসে ২০ টাকা (দুই মণ ধান) এবং ২০ কেজি চাল দিতেন নিজের সংসার থেকে। এরপর পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা কলেজে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন তাকে আমার জন্য প্রতি মাসে ১৫ মণ ধান বেচতে হতো। লোকজন মাকে নানা কথা বলতো। মা বলতেন, আমার ছেলের দাম সকলের হাজার বিঘা জমির চাইতে বেশি। তখনকার দিনে সেই গ্রামে কে বোঝে সেই কথা। নিজের অন্য ছেলেমেয়েগুলোকেও একইভাবে শিক্ষায় জড়িয়ে নিলেন। মার কাছে জীবনের বড় শিক্ষা। শিক্ষাই শক্তি। বাড়িতে হিন্দু মুসলমানে ভরে থাকতো। মা বলতেন, মানুষে মানুষে ধর্ম দিয়ে ফারাক করবানা। নিজে নামাজ রোজা করেছেন-কিন্তু কোনদিন কোন হিন্দুর সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করতেন না। তারা তাকে মা ডাকতো। যখন একটু বেড়ে উঠি মা তখন তার হাতিয়ার হিসেবে আমাকে ব্যবহার করা শুরু করেন। মা বললেন নিজে লেখাপড়া করলে হবে না, গ্রামের মানুষকে লেখাপড়া করাতে হবে। ওরা তোমার মতো বোর্ডি-এ থাকতে পারবে না, ঢাকা কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবে না। গ্রামে স্কুল কর। মায়ের উৎসাহেই ৬৯ সালে গ্রামে একটি হাই স্কুল দাঁড় করালাম। ৭২ সালে বাবা সেটি চালু করলেন। এরপর ৮৬ সালে আমি প্রতিষ্ঠা করলাম ভাটি অঞ্চলের প্রথম কলেজ যেটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং সরকারিকরণের তালিকাভুক্ত।

নব্বুই দশকের শুরুতে বাড়িতে গিয়ে চারপাশের বাড়িগুলোর অবস্থা দেখে মাকে জিজ্ঞেস করতাম, মা স্কুল-কলেজ হলো, লোকজন লেখাপড়াও করছে কিন্তু গ্রামটাতো বদলাচ্ছে না। মা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতেন, বাবারে পুরুষ মানুষ ঘর সংসার  তৈরিও করতে পারে না, বদলাতেও পারে না। আমার মাকে দেখলে সেই কথা সবাই বলতো। ততোদিনে পুরো গ্রামে মায়ের শত শত ভক্ত। আমার বাবার বাউন্ডুলে জীবনটাকে নিয়মে এনেছিলেন মা-ই। সবাই ডাকতো পীর মা। গ্রামের দুরাবস্থার কথা শুনে তিনি বললেন, পারলে একটি মেয়েদের স্কুল কর। মা জানতেন, আমি পারব। মায়ের কথায় ৯৬ সালে  পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিজের খরচে মা-বাবার নামে মেয়েদের স্কুল করলাম। প্রথম বছরেই স্কুলটা ছাত্রীতে ভরে গেল। মা বললেন, বাবারে, স্কুলটা অনেক দূরে-আমি যেতে পারিনা-আমার বাড়ির সামনের জমিটাতে স্কুলটা নিয়ে আয়। তোরা জমি দিয়ে কি করবি-জমিটা স্কুলেই যাক। মার কথায় আমরা ভাইবোনেরা বাড়ির সামনে ভাল জমিগুলো স্কুলেই দিয়ে দিলাম। সেই স্কুল আজ আমার মায়ের মতো শত শত মা  তৈরি করছে।

২০১৪ সালের জুন মাসে আমি আমার গ্রামে গিয়ে একটু জরিপ করে দেখেছি-মাই ঠিক বলেছেন। যে গ্রামে একজন মানুষ পায়ে জুতা দিতোনা, একজন দাঁত ব্রাশ করতোনা বা একটি পাকা ল্যাট্রিন ছিলো না বা কারও বাড়িতে যেখানে বসার একটি চেয়ার ছিলো না সেই গ্রামে খালি পায়ের একটি শিশু দেখিনি এবং এমন কোন বাড়ি পাইনি যেখানে পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। মায়ের নামের স্কুলের মেয়েরা পুরো গ্রামটাকে বদলে দিয়েছে। আমার মা আমাকে আমার গ্রামকে, আমার মাটিকে, আমার দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন। তিনি আমাকে তার মুখের ভাষাকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন। তিনি নিজের হাতে যুবক ছেলেটাকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন। দিনে রাতে কেঁদেছেন, রোজা রেখেছেন ছেলে ও তার সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধারা যেন ভালো থাকে। আমরা মাই ৭২ সালে দেশদ্রোহীদেরকে চরম শাস্তি দেবার ঠিকানাটা দিয়েছেন।

মা তোমাকে অনেক মনে পড়ে। তোমার জন্যে আমার  গ্রামের মূর্খ মেয়েরা এখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ওরাই এখন তোমার মুখ। আমি জানিনা, মা তুমি সেই গ্রামে না গেলে ওদের কি হতো। আসুন আমরা সবাই নিজেদের মার সাথে আমার মার সাধারণ  বৈশিষ্ট্যগুলো মেলাই। বস্তুত বাংলাদেশের সকল সন্তানের শিক্ষার প্রধান স্থপতি মায়েরা। একটু চোখ মেলে তাকালে দেখবেন এখনকার মায়েরা আমাদের মায়ের চাইতে আরও বেশি যত্নবান। রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে সন্তানের হাত ধরে কেবল যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেন তাতো নয়, নিজের কর্মজীবন ও সংসার গুছিয়ে সন্তানের সকল চাহিদা পূরণে তাদের কোনো তুলনা নেই। আমাদের জন্য এটি আরও একটি বড় অর্জন যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ৫৩ ভাগ মেয়ে। মেয়েকে রান্না ঘরে না পাঠিয়ে মায়েরা তাদের জীবন গড়ে তুলছেন। বাঙালি মায়ের এই অসাধারণত্ব নতুন কিছু নয়। সবাই আমার মায়ের চাইতে অনেক বেশি সচেতন।

তবে খুব সাম্প্রতিককালে যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে মনে হচ্ছে সন্তানের সাথে মায়ের (বাবারতো বটেই) দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মাঝে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার এক ধরনের হুজুগ তৈরি হবার ফলে মায়েদের কাছ থেকে শিশুরা শৈশবের শিক্ষাটাও পায় না। আমি ঠিক জানিনা মায়েরা কি উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠছেন কিনা। তা না হলে মায়ের কাছ থেকে মাতৃভাষা শেখার কথা, মাতভূমির প্রতি দরদ জন্ম নেবার কথা। মায়ের কাছেই ধর্ম শেখার কথা-ধর্ম নিরপেক্ষতা শেখার কথা। বাঙালি হবার কথা। বাংলার সংস্কৃতিতে যুক্ত হবার কথা। আমার বাবা নামাজ পড়ে বাউল গান শুনতে শুনতে ঘুমাতেন। মাই আমাকে বোঝাতেন বাঙালি তার নিজের মতো করে জীবনযাপন করে। প্রথমে মানুষ হবে, বাঙালি হবে এর পাশাপাশি ধর্ম কর্ম করবে। মিথ্যা না বলা মার কাছে শিখেছি। অন্যায় না করা মার কাছে শিখেছি। আমাদের নতুন প্রজন্মের মায়েরা কি আমাদের মায়ের মতো নন? খুব স্বাাভাবিক নিয়মেই একই সাথে মায়ের প্রতি প্রবল ভালোবাসা জন্ম নেবার কথা। এখনকার মায়েরা কি এই শিক্ষাগুলো দিতে পারছেন না? আমারতো মনে আছে। সকালে ঘুম থেকে তুলে মা মক্তবে পাঠাতেন। মক্তব থেকে আসার পর গোসল করিয়ে ভাত খাইয়ে স্কুলে পাঠাতেন। মাইতো ভিন্ন ধর্মের মানুষের মা হয়ে আমাকে তাদের ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন। মাকেই দেখেছি একাত্তর সালে হাজার হাজার হিন্দু বাড়ি রক্ষা করার কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখনকার মায়েরা কি নীতি  নৈতিকতা তাদের সন্তানদেরকে শেখান না?

এটি কি এমন যে সন্তানেরা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হতে হতে মায়ের কোল হারাতে বসেছে? এটি কি এমন যে মায়েরা প্রযুক্তিপ্রতিবন্ধী এবং মায়েরা তাদের পাশে বসতেও পারছেন না। স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপে প্রযুক্তি মাদেরকে সন্তানের ওপর প্রভাব বিস্তারের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এমনকি যে মায়েরা নিজেরাই তাদের অবস্থান বদলেছেন? আমি আমার মাকে এক প্যাচ শাড়ি পড়ে খালি গায়ে গোবরের চট লেপতে দেখেছি । গ্রামের কোন মানুষতো তাকে অশ্লীলতা বলেনি। কেন এখনকার মাদেরকে শ্লীলতার জন্য হিজাব আর বোরকার আড়ালে আমাদের বাঙালিত্ব লুকাতে হচ্ছে। কেন মায়ের কপালে টিপ বা পায়ে আলতাটা দেখিনা। আমিতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও আমাদের সকল সহপাঠিনীকে পায়ে আলতা দিতে দেখতাম। কপালে টিপ না থাকলেতো মেয়েই মনে হতোনা। সেইসব কেন হারিয়ে গেলো। আমাদের সময়ে যে মেয়ে গান জানতো বা নাচতে পারতো তাকে বেশি সম্মান দিতাম। সেইসব কেন এখন নেই? মায়েরা নিজের হাতে সন্তানদেরকে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানে পাঠাতেন। এখনকার মেয়েরা সেটি কি করেন না? আমার বাবাকে দেখতাম মসজিদে নামাজ পড়ে আলিমুদ্দিন ফকিরকে একতারা নিয়ে বাবাকে বাউল গান শোনাতে। মা আলিমুদ্দিনকে যত্ন করে খেতে দিতেন। নিজেও শুনতেন সেই গান। আজকের মায়েরা কি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি বা আধুুনিক গান বা মমতাজের গান শোনা বন্ধ করে দিয়েছেন? তাদের সন্তানের কোন গান শোনে বা কার বই পড়ে তার খবর কি তারা রাখেন? তারা কি খবর রাখেন, তাদের সন্তানেরা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা শরৎ পড়ার পাশাপাশি হুমায়ূন, শামসুর রাহমান বা নির্মলেন্দু গুণকে পাঠ করে কিনা?

আমি জানি না, এখনকার মায়েরা অসহায় কিনা। তবে এটি বুঝি নতুন প্রজন্ম যেভাবে ক্ষয়িষ্ণু পথে চলতে শুরু করেছে সেই পথ থেকে পুরো জাতিকে ফিরিয়ে আনতে পারেন কেবল বাংলার মায়েরাই। আমি অনেক বেশি আশাবাদী যে সেই মায়েরা এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। আমি এই মায়েদেরকে ওঠে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। মায়েরা আপনারাই আপনাদের সন্তানকে জানাতে পারেন কেন আমরা পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ  তৈরি করেছি। আমরা যে একটি ধর্মভিত্তিক জাতি নই, আমরা যে আউল-বাউল ফকির-আউলিয়া-দরবেশের দেশ এবং সেখানে যে  বৈষ্ণববাদ আর সুফিজম বিস্তৃত হয়েছে। আমরা যে সবার ওপরে মানুষ সত্য সেই বাণীটি অন্তরে গেঁথে রাখি সেটি মাকেই তার সন্তানের কানে দিতে হবে। এই সময়ে  আমি আমার মাকে মিস করছি না এজন্য যে আমাদের মায়েরা আমার সেই মায়ের অভাবটাকে পূরণ করে দেবেন, এই আশাটি আমার রয়েছে।

লেখক :  তথ্যপ্রযুক্তিবিদ,  কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক।
[email protected], www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।