বিক্ষিপ্ত ভাবনা


প্রকাশিত: ০৪:০৮ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৬

১.

গুলশান ক্যাফে এবং শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে সংঘটিত জঙ্গি হামলার পর সারা দেশের সব মানুষেরই নতুন এক ধরনের উপলব্ধি হয়েছে। হঠাৎ করে সবাই বুঝতে পেরেছে, ধর্মান্ধ এবং জঙ্গি বলতেই এতদিন চোখের সামনে যে মানুষগুলোর চেহারা ভেসে উঠত সেটা সঠিক নয়। এই দেশের সবচেয়ে নৃশংস জঙ্গিদের বড় একটা অংশ হচ্ছে কমবয়সী আধুনিক তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করেছে, তাদের নির্দেশ দিয়েছে– কোনো ছাত্র যদি অনুপস্থিত থাকে সেটা কর্তৃপক্ষকে জানাতে। একজন ছাত্র হঠাৎ করে ক্লাশে আসা বন্ধ করে দিলে সেটা সবার আগে বুঝতে পারে তাদের শিক্ষকেরা।

সত্যি কথা বলতে কী, আমি দীর্ঘদিন থেকে কোন ছাত্র ক্লাশে আসে আর কোন ছাত্র ক্লাশে আসে না– সেটা খুঁজে বেড়াই। তবে জঙ্গির খোঁজে নয়, সম্পূর্ণ অন্য কারণে। একজন ছাত্র বা ছাত্রী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আমরা তখন তাদের আর বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করি না; আমরা তখন তাদের একজন দায়িত্বশীল বড় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি।

কাজেই একজন বড় মানুষ ইচ্ছে হলে ক্লাশে আসবে; ক্লাশে না এসেই যদি সে তার সব লেখাপড়া করে ফেলতে পারে তাহলে ক্লাশে আসবে না। কাজেই মনে হতে পারে, আমাদের বুঝি তার স্বাধীন কাজকর্মে নাক গলাতে পারব না। কিন্তু আমি খুবই পুরনো মডেলের মানুষ, প্রতি ক্লাশে ছাত্রছাত্রীদের নাম ডাকি, একজন ছাত্র টানা কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকলেই আমি তাকে খুঁজে বেড়াই। ক্লাশে অনুপস্থিত ছাত্রদের খবর পাঠিয়ে ক্লাশে ডাকিয়ে আনি এবং তাদের ক্লাশে হাজির থাকতে বাধ্য করি।

শুধু তাই নয়, ক্লাশে অনুপস্থিত থাকলে তাদের আমার বিশাল একটা লেকচার শুনতে হয় এবং আমার ধারণা, বড় হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরা তাদের স্বাধীনতায় এ রকম বাগড়া দেওয়ায় আমার ওপর যারপরনাই বিরক্ত হয়। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। মাথা নিচু করে সেই লেকচার হজম করতে হয়।

আমার লেকচারের ভাষা খুব কঠিন এবং তার সারসংক্ষেপ অনেকটা এ রকম: “তুমি একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছাত্রের পেছনে সরকারের কত টাকা খরচ হয় তুমি জানো? যদি না জেনে থাকো তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকে প্রতি বছর পাশ করে বের হয়ে যাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করো, হিসাব পেয়ে যাবে। দেখবে, দেশের সবচেয়ে হাইফাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য যত টাকা খরচ করে তোমাদের পেছনে সরকার তার থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ করে। কাজেই তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি নিজের টাকায় কিংবা তোমার মা-বাবা বা গার্ডিয়ানের টাকায় লেখাপড়া করছো, জেনে রাখো, সেটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। তুমি এখানে পড়ছো সরকারের টাকায়।”

এরপর আমি গলার স্বর আরো ভারী করে আরো কঠিন ভাষায় বলি, “তোমাকে লেখাপড়া করানোর জন্য সরকার সেই টাকা কোথা থেকে পায়? সরকার সেই টাকা পায় দেশের খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে, শ্রমিক-চাষী-মজুরদের কাছ থেকে। কাজেই তুমি মোটেই নিজের টাকায় লেখাপড়া করছো না– তোমার লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছে এই দেশের কোনো একজন গরিব মানুষ, কোনো একজন চাষী, রিকশাওয়ালা কিংবা গার্মেন্টসের কোনো একজন মেয়ে। যে গরিব মানুষের টাকায় তুমি বাংলাদেশের বড় একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছো, সেই গরিব মানুষটি হয়তো নিজের ছেলে বা মেয়েকে লেখাপড়াই করাতে পারেনি। কিন্তু তোমার লেখাপড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছে।”

তারপর আমি লেকচার শেষ করার জন্য বলি, “কাজেই তোমার ইচ্ছে হলো না, তাই তুমি ক্লাশে আসবে না– সেটি হতে পারে না। তোমার সেই অধিকার নেই। তোমাকে ক্লাশে আসতে হবে এবং লেখাপড়া করতে হবে।”

সাধারণত এ রকম কঠিন লেকচারের পর কাজ হয়; ছেলেমেয়েরা প্রায় নিয়মিত ক্লাশে হাজির থাকে। আমি এতদিন তাদের শুধুমাত্র নিজের দেশের জন্য দায়বদ্ধতার কথা শুনিয়েছি। বোঝাই যাচ্ছে, এখন থেকে ক্লাশে হঠাৎ করে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী অনুপস্থিত থাকতে শুরু করলে, আমাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে; দেখতে হবে, সে হঠাৎ করে জঙ্গিদের খাতায় নাম লিখিয়েছে কি না!

১ জুলাইয়ের এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দেশের সব মানুষের মতো আমিও আধুনিক শিক্ষিত তরুণদের এই অচিন্তনীয় নৃশংসতার কারণটি বোঝার চেষ্টা করেছি। বুঝতে পারিনি। আমাদের যেসব সহকর্মী এই বিষয়গুলো নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করে থাকেন, তাঁরা আমাকে ‘ব্রেন ওয়াশের’ প্রক্রিয়াটি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি।

তারপরও আমি ‘মানুষ কেমন করে অমানুষ হয়ে যায়’– সেটা এখনো বুঝতে পারিনি। শুধু অনুমান করতে পারি, যারা এই তরুণদের ব্যবহার করে, তাদের এই দেশের জন্য কোনো মায়া নেই। দেশের জন্য মায়া থাকলে একজন তরুণ নিশ্চয়ই জঙ্গি হতে পারে না।

আমার খুব জানার ইচ্ছে করে, এই আধুনিক তরুণেরা কোনো একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে গিয়েছে কি না, কোনো বিজয় দিবসে ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছে কি না, বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা থাকলে টেলিভিশনের সামনে বসে সাকিব-মাশরাফি-মুস্তাফিজদের খেলা দেখে আনন্দে চিৎকার করেছে কি না! আমরা কি আমাদের দেশের তরুণদের ভেতরে দেশের জন্য ভালোবাসার জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছি?

এই বিষয়টা নিয়ে যখন আমি চিন্তা করি, তখন সবসময়ই আমি সাধারণত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আমি আগেই বলেছি, নৃশংস জঙ্গিদের মানসিকতা আমি কখনো বুঝতে পারব না। কিন্তু আমাদের একেবারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাভাবনা এবং মানসিকতাটুকু তো আমাদের বোঝা উচিৎ। আমরা কি তাদের বুকের ভেতর দেশের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসার জন্ম দিতে পেরেছি? কেন এই দেশের সবচেয়ে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হয়– পাশ করেই দেশের বাইরে চলে যাওয়া এবং কখনোই ফিরে না আসা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ব্যাচ আছে যাদের একজন ছাত্রও দেশে নেই।

আমাদের গরিব-দুঃখী চাষী-শ্রমিক-মজুরের টাকায় লেখাপড়া করে ছেলেমেয়েরা কেন বাইরের লেখাপড়া শেষ করে নিজের দেশে ফিরে আসতে চায় না? কেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের কথা মনে করে তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে না? পয়লা বৈশাখে কেন তারা বটমূলে গান শুনতে চায় না? কেন বই মেলায় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য মন উচাটন হয় না? আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঝমঝম বৃষ্টি দেখার জন্য কেন তাদের মন উতলা হয় না? এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে কিছু একটা করার জন্য কেন তাদের বুক টনটন করে না? আমি সেটাই বুঝতে পারি না। আমি কেমন করে একজন জঙ্গির চিন্তাভাবনা বুঝতে পারব?

২.

জঙ্গিদের নৃশংসতার ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর আজকাল ব্যাপারটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছে। কারো সঙ্গে দেখা হলেই এ বিষয়ে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলছে। আমি যতগুলো ঘটনার কথা শুনেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনাটি জঙ্গিদের নিয়ে নয়, ছোট শিশুদের নিয়ে।

বাচ্চাদের একটা স্কুলের শিক্ষকেরা আবিষ্কার করলেন, হঠাৎ করে একটা শিশু কেমন যেন মারমুখী হয়ে গেছে এবং স্কুলে এসে যখন তখন অন্য বাচ্চাদের মারতে শুরু করছে। কিছুদিন পর আবিষ্কার হলো, সে সবাইকে মারছে না, ঘুরেফিরে সে নির্দিষ্ট কিছু শিশুকে মারছে এবং যাদের মারছে তারা সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। স্বাভাবিক কারণেই মারকুটে শিশুর সঙ্গে শিক্ষকেরা কথা বললেন এবং জানতে পারলেন, বাসা থেকে তাকে বলা হয়েছে, ‘হিন্দুরা হচ্ছে কাফের এবং কাফেরদের মারতে হবে। তাদের মারলে সওয়াব হবে।’ যে দুধের শিশুটি এ রকম একটা ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে, বড় হওয়ার পর তাকে নৃশংস একজন জঙ্গি বানানো নিশ্চয়ই পানির মতো সহজ।

গুলশান ক্যাফের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে সবার টনক নড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমার ধারণা, ব্যাপারটা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের নয়। এর শেকড় অনেক গভীরে, একেবারে দুধের শিশুরা যেন ঠিকভাবে বড় হয়-সেটাও দেখতে হবে। খুব ছোট একটা শিশুকে ভয়ংকর কিছু ধারণা দিয়ে বড় হতে দিলে যেরকম পরে আমাদের মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকে না, ঠিক সেরকম তাদের সুন্দর কিছু বিশ্বাস দিয়ে বড় করলে ভবিষ্যতে তারাই আমাদের সম্পদ হয়ে যাবে।

কাজেই আমি মনে করি, একেবারে ছোট শিশুদের কারিকুলাম, বইপত্রগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে তাদের জন্যে এমনভাবে বইগুলো লেখা হোক, তারা যেন সেখান থেকেই মানুষ হওয়ার প্রথম শিক্ষা পেয়ে যায়। তারা যেন একটি বিশ্লেষণী (Analytical) মন নিয়ে বড় হয়, ধর্মান্ধ মানসিকতা নিয়ে বড় না হয়।

৩.

গত কিছুদিনে সবাই নিশ্চয়ই আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করেছে; কিন্তু কেউই সেভাবে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার সাহস পাচ্ছে না। সেটি হচ্ছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গি-সমস্যা সমাধান করার জন্য ‘ছাত্রলীগ’ সমাধান। খবরের কাগজে দেখলাম, ছাত্রলীগ ঘোষণা দিয়েছে– তারা সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কমিটি করে দেবে। খবরটি পড়ে আমি হাসব না কাঁদব; বুঝতে পারছি না।

আমি প্রায় দুই যুগ থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। কাজেই ছাত্রদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খুব কাছে থেকে দেখে আসছি এবং তাদের কাজকর্ম খুব ভালো করে জানি। বিএনপি-জামায়াতের আমলে ছাত্রলীগ খুঁজে পাওয়া যেত না, এখন তাদের সংখ্যা অনেক। বেশ কিছুদিন আগে আমাদের কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হবে এবং যারা সেগুলো দেবে হঠাৎ করে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাল যে ছাত্রলীগের কিছু নেতা তাদের কাছে এত বড় অংকের টাকা চাইছে যেটা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মেজাজ খুব খারাপ হলো এবং আমি নেতাদের ডেকে পাঠালাম (এর মধ্যে একজন আমার সঙ্গে দেখা হলেই পা ছুঁয়ে সালাম করে ফেলে)।

আমি যখন তাদের ঘটনাটা জানালাম তখন একজন নেতা গলা কাঁপিয়ে ঘোষণা দিল, “স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আমার ছেলেদের বলে দিয়েছি তারা চাঁদা চাইবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার কোনো প্রজেক্টের কোথাও কখনো চাঁদা নেওয়া হবে না।” আমি বললাম, “না, শুধু আমার বেলায় তোমরা ছাড় দেবে– এটা হতে পারবে না। তোমাদের বলতে হবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো চাঁদাবাজি হবে না।” ছাত্রলীগের নেতা মোটামুটি সরল মুখে বলল, “না, স্যার, সেটা সম্ভব না!” তারপর আবার আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে বের হয়ে গেল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ঘটনা আমি দেখেছি তার মধ্যে এগুলো হচ্ছে তুচ্ছ ঘটনা। বড় ঘটনাগুলোর কথা দেশের সবাই জানে। যখন ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগের ছেলেদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলিয়েছেন, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ‘আগাছা উপড়ে ফেলতে হবে।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হলো। সেই আগাছাকে আসলে উপড়ে ফেলা হয়নি, জমিতে সার দিয়ে আগাছাগুলোকে আবার নতুন করে লাগানো হয়েছে। বহিষ্কার করা আসলে একটি লোক-দেখানো ব্যাপার; সবাই নিজের জায়গায় আছে।

ছাত্রলীগের যেসব কমিটি করা হয়েছে, সেখানে এই আগাছাগুলোকে বড় বড় পদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জল-হাওয়া দিয়ে এই আগাছাগুলো বড় করেছে, তারা ধীরে ধীরে মহীরুহ হয়ে উঠছে। আমি ব্যাপারগুলো টের পাই। কারণ, যখনই কোনো কিছু কেনাকাটা করতে হয়, কোনো সাপ্লায়ার ছাত্রলীগের ভয়ে এখানে কোনো কিছু সাপ্লাই দিতে রাজি হয় না। শুধু তাই নয়, নিজেদের ভেতরে মারামারি করে এখানে লাশ পর্যন্ত পড়েছে।

যে সংগঠনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপক্ষো করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকে এবং যাদের কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন ছোটখাটো কেনাকাটাও করতে পারি না, সেই সংগঠনগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের কমিটি করে জঙ্গি-সমস্যা মিটিয়ে দেবে– এ কথা এই দেশে আর যেই বিশ্বাস করুক, আমি বিশ্বাস করি না!

একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংগঠন থাকলেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি তৈরি হবে না– এর থেকে হাস্যকর যুক্তি আর কিছু হতে পারে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ খুব ভালোভাবেই আছে, স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর তাদের দেখভাল করেন। যাদের অপরাধের জন্য বহিষ্কার করা হয়, তাদের আবার বড় পদ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। এখান থেকে কয়েকদিন আগে একটি ছাত্রকে জঙ্গিসংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। শুনতে পাচ্ছি, আরো অনেকে আছে।

সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে বিকশিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হয়। ক্লাশরুমের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সময় দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটুকু যেন তাদের আনন্দময় একটা স্মৃতি হয়ে থাকে, তার জন্য চেষ্টা করতে হয়। আমি প্রায় দুই যুগ থেকে এখানে এই কাজগুলো করে এসেছিলাম। গত বছর যখন আবিষ্কার করেছি যে, এখানে একজন ভাইস চ্যান্সেরর ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারেন এবং সবকিছু জেনেশুনেও সরকার না দেখার ভাণ করে তাঁকে বহাল তবিয়তে রেখে দিতে পারে, তখন আমি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।

আমার মনে হয়, সারা দেশে আমার মতো কতজন শিক্ষক উৎসাহ হারিয়ে নিজেদের ভেতর গুটিয়ে নিয়েছে সরকার তার একটা জরিপ নিয়ে দেখতে পারে। না দেখার ভাণ করলেই সমস্যা চলে যায় না, সমস্যার সমাধান করতে হলে তার মুখোমুখি হতে হয়।

লেখক : অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।