নতুন মুদ্রানীতিতে চাঙ্গা হতে পারে পুঁজিবাজার


প্রকাশিত: ০৩:১৮ এএম, ২৯ জুলাই ২০১৬

দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এসপ্তাহে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই গত মঙ্গলবার আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ১৩ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। বাজারে লেনদেনে আইটেম ভিত্তিক ওঠানামা করছে। বিনিয়োগকারীরা বেছে বেছে ভালো শেয়ারে লেনদেন করায় অনেকেই বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিতে পারছে। এদিকে গত  মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। যাতে প্রায় ৪৮ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার ডিএসইতে ৪৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৫২ কোটি ৮৪  লাখ টাকার বেশি। এদিকে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের নিম্নমুখী অবস্থায় লেনদেন শেষ করেছে।

এসপ্তাহের মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন। আর এবারের মুদ্রানীতিতে গভর্নর শেয়ারবাজারের উন্নয়নের বিষয়ে কিছু মৌলিক পরামর্শ দিয়েছেন।  পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানির মূলধন উত্তোলন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ কমিয়ে আনার বিষয়েও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নজর দেয়ার পরামর্শ রয়েছে। এতে ইস্যুয়ারের উপর খরচ কমে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এবারের মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের উপর সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী হয়েছে। যদি বাজারে আইপিও ইস্যুর ক্ষেত্রে খরচ কমে যায় তাতে প্রাথমিকভাবে ইস্যুয়ার এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা অনেকাংশে উপকৃত হবে। বাজার থেকে উদ্যোক্তাদের ইস্যু আহরণের ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ কমলে ইস্যুয়ার পুঁজিবাজারে নতুন শেয়ার আনতে আগ্রহী হবে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বাজার ও বিনিয়োগকারী দুপক্ষই উপকৃত হবেন। এ মুহূর্তে  বাজারে বিভিন্ন ভালো শেয়ার আসার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এই সিদ্ধান্তের ফলে তা কেটে যাবে। পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ার আসার পরিমাণ বাড়তে পারে।

এবারে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর ঋণের সঠিক ব্যবহার নিয়ে কঠোর থাকার পারমর্শ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। কোনোভাবেই ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে যাতে জঙ্গি অর্থায়ন না হয় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জঙ্গি দমনের বিষয়ে সরকার সজাগ এবং বিএসইসি এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। শেয়ারবাজারে জঙ্গি অর্থের বিনিয়োগ ও সন্ত্রাসবাদের প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে বিএসইসির কঠিন সতর্কতা রয়েছে। এরইমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি উত্তোলন করে জঙ্গি অর্থায়ন না হওয়ার বিষয়ে বিএসইসি সজাগ আছে। এছাড়াও এ সংশ্লিষ্ট কোনো বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের বিষয়ে বিএসইসি, আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিডিবিএল ও ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট নিবিড় সতর্কতা অবলম্বন করছে বলে জানা যায়।

এদিকে গুলশান হামলার পরে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আশা করা যায়, বিদেশীদের টাকা বাজারে আসতে সময় লাগছে। বিদেশীরা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কম বেশি প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও ঋণ দেয়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করার কারণে ঋণপ্রদানের পরিমাণও কমে যাবে। এবারের মুদ্রানীতিতে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেরই উৎপাদনমুখি প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ গ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকছে। তবে সবচেয়ে আশার কথা হল অপরিবর্তিত থাকছে নীতিনির্ধারণী সুদের হার। তাই এবারের নতুন ‘সতর্কতামূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ মুদ্রানীতিকে স্বাগত জানাই। পুঁজিবাজারবান্ধব মুদ্রানীতি সামনে বাজারের চাকা ঘুরাতে সহযোগিতা করবে বলে আশা করা যায়।

লেখক :  বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো।  সদস্য, এফবিসিসিআই।  কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি। বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।